প্রতি বছর হজ সম্পাদন করে তাওয়াফে জিয়ারত করতে এসে হাজিগণ দেখতে পান নতুন গিলাফ।
সুপ্রাচীন প্রথা অনুযায়ী পবিত্র হজের দিন এ গিলাফ পরিবর্তন করা হয়। সেদিন বাইতুল্লাহ চত্ত্বরে ভিড় থাকে কম। এ সুযোগেই সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাবা শরিফে নতুন গিলাফ পরিয়ে থাকেন। সে মোতাবেক আজ বাদ ফজর পরিবর্তন করা হলো পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ। এ কাজে নেতৃত্ব দেন হারামাইন আশ-শরিফাইন এর সম্মানিত প্রধান ইমাম শায়খ ড. আব্দুর রহমান আস-সুদাইস।
সময় কাবা শরিফের গিলাফ নিচ থেকে তিন ফুট গুটিয়ে রাখা হয়। আর ভাজ করে রাখা গিলাফকে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়। কারণ হাজিরা গিলাফের মধ্যে ঢুকে যায়। আর এমনটি ইহরামে পরিপন্থী কাজ।
গিলাফের বিবরণ
৬৭০ কেজি রেশম, ১৫০ কেজি সোনা ও রূপার তার, ৪৭ থান সিল্কের কাপড় সম্বনয়ে দক্ষ কারিগরের সহযোগিতায় নির্মিত হয় কাবার ‘কিসওয়া’ বা গিলাফ। কাবা শরিফের গিলাফের মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গ মিটার। প্রতিটি টুকরোর ১ মিটার লম্বা, ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া। যা একটার সঙ্গে আরেকটাকে সেলাই করে যুক্ত করা হয়।
পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফের মধ্যে কুরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি গুলোকে নিখুঁতভাবে স্বর্ণের প্রলেপযুক্ত তার দিয়ে সেলাই করা হয়।
আর সম্মানজনক কাজটি করে থাকেন বনি শায়বা এবং বনি তালহা গোত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। পবিত্র কাবা শরিফের চাবি হেফাজতের গুরুদায়িত্বও তাদের কাছেই।
বর্তমানে যে গোত্রপতির কাছে কাবা শরিফের চাবির দায়িত্ব রয়েছে; তিনি হলেন – সিনিয়র তত্ত্বাবধায়ক সালেহ বিন জাইন আল আবিদিন আল-শায়েবা।
প্রতি বছর ২টি গিলাফ তৈরি করা হয়। যার একটি ৮-৯ মাস সময়ে হাতে তৈরি করা হয়। আর অন্যটি মেশিনে ১ মাসে তৈরি করা হয়।
কাবা শরিফের ‘কিসওয়া’ তথা গিলাফ তৈরির পাশাপাশি মদিনা শরিফের প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুজরার গিলাফও একই স্থান থেকে তৈরি করা হয়।
পবিত্র মক্কা নগরী থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত একটি কারখানায় এ গিলাফ তৈরি করা হয়।
বাদশাহ আব্দুল আজিজ আল-সৌদ তাঁর শাসনামলে ১৩৪৬ হিজরি সালে উম্মুল জুদ আঞ্চলে এ কারখানাটি স্থাপন করেন। এ কারখানা স্থাপনের আগে মিশর, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে এ গিলাফগুলো তৈরি করে আনা হতো।
উল্লেখ্য যে, মালিক তুব্বা নামক এক শাসক সর্বপ্রথম কাবা শরিফের গিলাফ পরিধান করান। অতঃপর বাদশাহ ফাহাদের সময়কালে ১৪০৩ ও ১৪১৭ হিজরিতে কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়। এর আগে প্রত্যেক বছর কাবা শরিফে গিলাফ পরিবর্তন করা হতো না। তখন থেকেই প্রতি বছর কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়।
কাবার গিলাফ পরিবর্তন করে নতুন গিলাফ পরানো এবং কাবা শরিফ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাকে ইসলামের পূর্ব যুগ থেকেই সম্মানের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা আজও বিদ্যমান।