২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, ঘড়ির কাঁটায় ঠিক পাঁচটা ২২ মিনিট। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তৃতা শেষ করে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা হাতে থাকা একটি কাগজ ভাজ করতে করতে এগুতে থাকলেন মঞ্চের সিঁড়ির দিকে। মুহূর্তেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। আর জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে।
ওই হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং আহত হন অন্তত আরো ৫০০ জন। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সেই বিভীষিকাময় একুশে আগস্টের ১৪তম বার্ষিকী।
পলাতক ১৮ আসামিরা কে কোথায়?
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২জন। এর মধ্যে ৩জন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এই ৩ আসামি হলেন— জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শহীদুল আলম বিপুল। বাকি ৪৯ আসামির বিচার চলছে।
এরমধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক তিন আইজিপি ও পকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন নেতা আব্দুল মাজেদসহ ২৩জন আসামি কারাগারে ও ৮জন জামিনে রয়েছেন। আর এখনো পলাতক রয়েছেন ১৮জন।
পলাতক আসামিদের মধ্যে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। এছাড়া, মাওলানা তাজউদ্দিন আহমেদ ও তার ছোট ভাই রাতুল বাবু দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে আছেন এবং হরিস চৌধুরী বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেছেন বলে জানা গেছে। তবে বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কোন তথ্য নেই বাংলাদেশের কাছে।
পলাতকদের মধ্যে সাবেক মেজর জেনারেল এটিএম আমিন এবং সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এছাড়া মোহিবুল মুস্তাকিন ও তার ভাই আনিসুল মুরসালিন বর্তমানে ভারতে তিহার জেলে রয়েছেন।
জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে রেজাবাইর ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সে সময়ের উপ-কমিশনার (পূর্ব) এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ওবায়দুর রহমান এবং খান সাঈদ হাসানও বিদেশে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।
সূত্র জানায়, তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানে রয়েছে।
পলাতকদের ফেরানোর চেষ্টায় সরকার:
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক ১৮ জন আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক ১৮ আসামিকে ফিরিয়ে আনতে আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিদেশে তারা কে কোথায় অবস্থান করছে তা আমরা এরই মধ্যে জানতে পেরেছি। তাদের ফিরিরে আনতে সরকার আইনি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে পলাতক রয়েছে ১৮ জন। পলাতক এই আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার আইনি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।