২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় খালেদা-তারেক জড়িত: প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি

আজ থেকে ১৪ বছর আগে আজকের দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রায় গ্রেনেড হামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হামলার আগে পরের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে এই অভিযোগ করেন তিনি।

হামলার ১৪ বছর পূর্তির দিনে সকালে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিহতদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।

এরপর তিনি একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আর বক্তব্য শেষে নিহতদের স্বজন ও আহতদের স্মজনদের সঙ্গে সময় কাটান।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রায় নজিরবিহীন হামলা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা আর্জেস গ্রেনেড ছুড়ে এবং পরে গুলি চালিয়ে সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাকে নেতা-কর্মীরা মানববর্ম বানিয়ে রক্ষা করেন। তবে প্রাণ হারান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন। আগত হয় অগুণতি মানুষ।

সে সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি এবং তারা সে সময় এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে।

আর হামলার আগে ও পরের নানা ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুব স্বাভাবিকভাবে আসে, এই যে হত্যাকাণ্ডের চেষ্টা, এর সাথে বিএনপি একেবারে যে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। খালেদা জিয়া, তার ছেলে (তারেক রহমান) সব যে জড়িত, তার কোনো সন্দেহ নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, যখন এই ধরনের সমাবেশ বা শোভাযাত্রা হয় তখন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী দল করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা আশপাশের ছাদে অবস্থান নেয়। কিন্তু ২১ আগস্টের সেই সমাবেশে এই নেতা-কর্মীদের কোনো ভবনে উঠতে দেয়নি পুলিশ।

‘আপনারা সেদিন স্মরণ করে দেখেন, সেদিন কিন্তু ছাদে কাউকে যেতে দেয়নি, কাউকে পাহারা দিতে দেয়নি। পুরা বন্ধ ছিল। কী কারণে?’-প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।

হামলার পর পুলিশের ভূমিকাও এতে সে সময়কার বিএনপি সরকারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা যখন আহত অবস্থায় পড়ে আছে কাতরাচ্ছে সেই দিন অন্য যারা নেতা কর্মী আছে তারা যখন ছুটে আসল সাহায্য করতে, তখন ওই অবস্থায় টিয়ারশেল মারা হলো, লাঠিচার্জ করা হলো।’

‘একটা ঘটনা ঘটলে পরে সাধারণত পুলিশ যায় মানুষকে সাহায্য করতে। আমরা সেদিন দেখলাম একটা ভিন্ন চিত্র। পুলিশ সাহায্য করতে না, উল্টো যারা সাহায্য করতে ছুটে আসছে, তাদের ওপর লাঠিচার্জ তাদের ওপর টিয়ারশেল মেরেছে।’

‘লাঠিচার্জ করে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করেছিল যেন মামলাকারীরা নির্বিঘ্নে সেখান থেকে চলে যেতে পারে, সেই সুযোগটাই সৃষ্টি করেছিল।’

সেদিন ওই এলাকায় কাজ করা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তাকে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে শাসানো হয়েছিল বলেও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘সে (গোয়েন্দা কর্মকর্তা) পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ফোন করে, সে জানতে চায় এটা কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তাকে ধমক দিয়ে বলা হয়, তোমার ওখানে কী কাজ, তুমি এখান থেকে সরো।’

‘যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা একটু সাহায্য করতে চেষ্টা করেছে, তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে, বিএনপির পক্ষ থেকে তিরস্কার করা হয়ৈছে। তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সভা-সমাবেশ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পুলিশের সব সময় ঘিরে থাকা, দলীয় কার্যালয়ের সামনে আমাদের দাঁড়াতে না দিলেও সেদিন পুলিশ নির্বিঘ্নে তাদেরকে আসতে দেয়ার মধ্যেও চক্রান্ত ছিল বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

বলেন, ‘তারা এখানে এসে যেভাবে হামলা করল, তাতে খুব স্বাভাবিকভাবে সকলেই বুঝতেই পারে এই হামলার পেছনে কারা ছিল, কে ছিল।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে