গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ‘ফরমায়েশি’ হতে পারে : রিজভী

ডেস্ক রিপোর্ট

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ‘ফরমায়েশি’ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। সরকারি দল রায় লিখে দিয়ে আদালতের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ দলটির।

universel cardiac hospital

শনিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একুশে আগস্টের মামলার রায় ঘনিয়ে আসা এবং এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

হামলার দিন পা উড়ে যাওয়া প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান ২৪ আগস্ট। আর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে গতকাল শুক্রবার সকালে বনানী কবরস্থানে যান ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বিএনপিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নতুন করে সংকটে ফেলতে পারে। সেপ্টেম্বরে রায়ের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার কারণেই বিএনপি নেতারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় একুশে আগস্টের মামলার রায়কে প্রভাবিত করার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছেন। একুশে আগস্ট বোমা হামলা মামলার রায় নিজেরা লিখে তা আদালতকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাবেন কি না মানুষের মনে সে সংশয়ও এখন দেখা দিয়েছে। তাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় একটি ফরমায়েশি রায় হতে যাচ্ছে।’

রিজভী বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই দেখছি আওয়ামী লীগ একুশে আগস্ট বোমা হামলা মামলা নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনীতি করছে। তাদের আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ও এ মামলার চার্জশিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের দলীয় লোক কাহহার আকন্দকে তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। তার আগেই কাহহার আকন্দ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে অবসরে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, এমনকি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘রাজনৈতিকউদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাকে পুলিশ বিভাগে ফের নিয়োগ দিয়ে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা করা হয় ২০০৯ সালে। দলীয় চেতনার তদন্ত কর্মকর্তা কাহহার আকন্দকে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যই ছিল এ মামলায় জনাব তারেক রহমানকে জড়ানো। পরে ২০১১ সালে তারেক রহমানের নাম সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করে শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চার্জশিটে জনাব তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এজন্য নানা ধরনের ফন্দি-ফিকিরের আশ্রয় নেওয়া হয়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের পর ১৬৪ ধারায় মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে তারেক রহমানের নাম ছিল না। শুধু এ মামলায় তারেক রহমানের নাম বলানোর জন্য অন্য মামলায় ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক ও নির্মম নির্যাতন করা হয় মুফতি হান্নানকে। পৃথিবীর কোনো দেশেই এ ধরনের নজির নেই। ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে মুফতি হান্নানকে দিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের নাম বলতে ও তথাকথিত স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেন কাহহার আকন্দ- যার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। একই ব্যক্তির একই মামলায় দুই বার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির নজিরও নেই।’

‘পরবর্তী সময়েআদালতে আবেদন করে মুফতি হান্নান তার তথাকথিত স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যও প্রত্যাহার করে নেন এবং তার ওপর বর্বোরচিত নির্যাতনের বিবরণ দেন। মুফতি হান্নানের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তারেক রহমানকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসানোর জন্য পুরস্কারস্বরূপ কাহহার আকন্দের বারবার পদোন্নতিসহ চাকরির মেয়াদ বেড়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগেও জানত না সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হবে। সেখানে মুফতি হান্নান কীভাবে দুই দিন আগেই জেনেছিলেন সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হবে? কার সিদ্ধান্তে সমাবেশস্থল মুক্তাঙ্গন থেকে সরিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নেওয়া হয়েছিল।’

‘মুফতি হান্নান তার স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন, মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সভার কথাটি তিনি জানতেন। আবার স্বীকারোক্তিতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছেন এবং সে জন্য তিনি তার বাড্ডার বাসা থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দিকে রওয়ানা দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো, মুফতি হান্নান মুক্তাঙ্গনে সভার কথা জেনে কেন শুরু থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন?’

‘মুফতি হান্নান সভার স্থান পরিবর্তনের সংবাদ পেয়েছিল তাহলে কে তাকে এ সংবাদটি দিয়েছিল? মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিতে গ্রেনেড নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বন্দুক ব্যবহারের কথা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও সিকিউরিটি অফিসার নাজিব আহমেদ বলেন, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ গাড়িতে অসংখ্য গুলি করা হয়েছে। এ বন্দুক ও গুলি এলো কোথা থেকে?’

রিজভী বলেন, ‘এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও গভীর ষড়যন্ত্রমূলক। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের সাহেবদের বর্তমান বক্তব্যেই সেগুলো পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের সাহেবরা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে প্রভাবিত করতেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জনাব তারেক রহমানকে নিয়ে বেসামাল বক্তব্য রাখছেন।’ জাতীয় নির্বাচনের আগে এ জাতীয় বক্তব্য সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।

রিজভী বলেন, ‘সামনে হয়ত আরও নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করবে সরকার। কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র ও মহাপরিকল্পনা করেন না কেন ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনাদের পতন ঠেকানো যাবে না। আপনাদের পতনের ভূমিকম্প শুরু হয়েছে।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে