সারাদেশ ডেস্ক
মেয়াদোত্তীর্ণ চুক্তির ২২ মাস পর অবশেষে দেশের চা শিল্পের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ও বোনাস বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০২ টাকা করা হয়েছে। আগামী সোমবার থেকে এ চুক্তি কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
গত ২০ আগস্ট ঢাকার মহাখালিতে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি(এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে শুক্রবার বিকেলে জানান বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী।
বর্তমানে চা শ্রমিকদের এ, বি ও সি ক্যাটাগরি বিদ্যমান রয়েছে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের কোন ক্যাটাগরির মজুরি কত বেড়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা এগ্রিমেন্টের(এম ও ইউ’র) পূর্বসমঝোতা। আপাতত স্বাভাবিকভাবে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ধরা হয়েছে ১০২ টাকা। এটা জেনারেলি এ ক্লাসের জন্য। অন্যান্য ক্যাটাগরির শ্রমিকের সিদ্ধান্ত এখনও হয় নাই। পরবর্তীতে এগ্রিমেন্টের মাধ্যমেই সবকিছুর ফাইনাল হয়ে আসবে।’
রামভজন কৈরী বলেন, ‘বর্তমানে একজন শ্রমিক ২ হাজার ৭২০ টাকা বোনাস পাচ্ছেন। এখন তা বেড়ে ৪ হাজার ৫৯০ টাকা হয়েছে।
এ ছাড়া মাসিক বেতনধারী একজন শ্রমিক ৩ হাজার ৬৫০ টাকা পেতেন। এখন তা থেকে বেড়ে ৫ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে। এছাড়া এখন থেকে ক্যাজুয়েল বা অস্থায়ী ঠিকাদার শ্রমিকরা স্থায়ী বা মসিক বেতনধারী শ্রমিকদের মজুরির সমান পাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দৈনিক মজুরি ৬৯ টাকা থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকায় উন্নীত হয়। সম্পাদিত ওই চুক্তি মোতাবেক ২০১৫ সালে ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়।
এর আগে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিটিএ) এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে মালিক পক্ষ এককভাবে ৪৮ টাকা থেকে ৫২, ৬২ এবং সর্ব্বোচ্চ মজুরি ৬৯ টাকা নির্ধারণ করেন। উল্লিখিত মজুরির মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
এদিকে বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে করা সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। কিন্তু মালিকপক্ষের টালবাহানায় চুক্তির মেয়াদ অতিবাহিত হওয়ার ২২ মাস পর নতুন এ চুক্তি সম্পাদিত হয়।
প্রসঙ্গত, দেশে ২০টি উপজেলায় ২২৮টি বাগান ও ফাঁড়ি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায়ই ফাঁড়ি বাগানসহ মোট চা বাগান হচ্ছে ৯৩টি। এসব চা বাগানে কর্মরত নারী এবং পুরুষ চা শ্রমিকের সংখ্যা রয়েছেন ৯৮ হাজার ৭৫২ জন।
চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য একটি মাত্র সংগঠন; সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
শ্রমিকদের ভোটের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তারা নির্বাচিত হন। প্রতি দুই বছর পরপর এই দুই সংগঠনের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরিসহ সুযোগ-সুবিধা নির্ধারিত হয়।
চলতি বছরের গত ২৪ জুন শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে মাখন লাল কর্মকার সভাপতি ও রামভজন কৈরী সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন।