বিশেষ প্রতিনিধি
সামনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যদিও নির্বাচনকালীন সরকার বা নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। সংশয় রয়েছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়েও। তারপরও এ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে বাইরে চলছে জোর প্রস্তুতি। আর এতে পিছিয়ে নেই নির্বাচন কমিশনও (ইসি)।
বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সংসদ ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে মত দিলেও সম্প্রতি দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। তবে ইভিএম কেনার উদ্যোগ নেয়া হলেও আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা এনিয়ে সন্দিহান খোদ ইসি।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেড় লাখ ইউনিট ইভিএম কেনার প্রকল্প ইসির অনুমোদন নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ব্যয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
সূত্র মতে, প্রতি ইউনিট ইভিএমের দাম পড়বে প্রায় দুই লাখ টাকা। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ইভিএমকে পরিচয় করিয়ে দিতে শিগগিরই ‘ইভিএম মেলা’র আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আপাতত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবেন তারা। সংসদ ভোটে ইভিএম ব্যবহার করার জন্য তাদের কোনো প্রস্তুতি নেই বা কমিশন থেকে তারা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্দেশনাও পাননি। তাদের মতে বর্তমানে যে সময় আছে তাতে ইভিএম পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করে এই সময়ের মধ্যে ব্যাপক হারে তা ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
সবাই না চাইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
সূত্র জানায়, দ্রত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ফল প্রকাশ ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় আস্থা ফেরানোর উদ্দেশ্যে ইভিএম কেনার জন্য ইসির প্রকল্পটি ছয়টি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে দেড় লাখ ইভিএম মেশিন ক্রয়, ভোটারদের মধ্যে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
ইসি সূত্র আরও জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র কমবেশি ৪০ হাজার আর ভোটকক্ষ কমবেশি ২ লাখ ধরা হয়েছে। সম্পূর্ণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একটি ও প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য অতিরিক্ত একটি ইভিএম রাখতে হবে। সে হিসেবে কমবেশি আড়াই লাখ ইভিএমের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে প্রায় তিন হাজার ইউনিট ইভিএম ইসির সংগ্রহে রয়েছে।
এর আগে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথম পর্যায়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১১ হাজার ৫৫৬ টাকা দরে ১৩০ ইউনিট ইভিএম সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় ধাপে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩২ হাজার ৫৪৭ টাকা দরে ৪০০টি ও তৃতীয় পর্যায়ে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ৪৬ হাজার ৫০১ টাকা দরে ৭০০টি সবমিলিয়ে ১ হাজার ২৩০ ইউনিট ইভিএম কেনে। যদিও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পরে পুরোনো ওই ইভিএম নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।