সিলেট জেলার জাফলং, লালাখাল, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পাংথুমাইকে ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহ সারা বছরই থাকে। ঈদুল আযহার ছুটিতেও ব্যতিক্রম নেই, বরং এবছরের ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের সংখ্যা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। সারা দেশ থেকে হাজার হাজার সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ ছুটে এসেছেন সিলেটে। কেউবা পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ আবার বন্ধুবান্ধবের সাথে।
সিলেট জেলার ছয় পর্যটন স্পটের পাশাপাশি চা-বাগান, কমলা বাগান, খাসিয়াপুঞ্জি সবই ঘুরে দেখছেন পর্যটকরা। তবে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের ভিড় ছিল জাফলংয়ে। গোয়াইনঘাট উপজেলার এ পাথরবেষ্টিত পর্যটনকেন্দ্র দেশের অন্যতম সুপরিচিত বলেই এখানে ভিড়টা তুলনামুলকভাবে বেশি। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অনেক পর্যটক একটু বিরক্ত হলেও উৎসবের আমেজই ছিলো সবার মাঝে।
কথা হয় জাফলং ঘুরতে আসা ময়মনসিংহের আদিব আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি আগেও কয়েকবার এসেছি এখানে। স্বপরিবারে এসেছি এই প্রথম। মায়াবী ঝরণাটা দেখা হয়নি আগে, এবারই প্রথম দেখলাম। প্রকৃতির কাছাকাছি আসতে পেরে ভালো লাগছে শুধু রাস্তাটা ভালো হলে আরো ভালো লাগতো।’ তাঁর স্ত্রী ফারিয়া জানান, ‘সিলেটের সবকিছুই সুন্দর। মেঘালয়ের পাহাড়গুলোও অসাধারণ, তার কোল বেয়ে নেমে আসা ঠান্ডা পানির নদী সত্যিই অপরুপ। জাফলং আর লালাখাল ঘুরেছি, দুই জায়গাই পছন্দ হয়েছে খুব।’ তবে প্রশংসার পাশাপাশি অভিযোগ জানাতে ভোলেন নি তিনি। ভেজা কাপড় পাল্টানোর কোনো জায়গা নেই, রাস্তা ভালোনা এইটুকু বাদ দিলে প্রথমবার জাফলং ঘুরতে আসা ফারিয়ার ভালোই লেগেছে।
বিছানাকান্দিতেও পর্যটকদের ঢল ছিলো চোখে পড়ার মতো। বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের সাথে যোগ দিয়েছেন সিলেটের স্থানীয় পর্যটকরাও। মেঘালয় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের নদী পিয়াইন আর পাংথুমাইয়ের পাহাড়ী ঝরণা মন কেড়েছে সবার। নৌপথে এক ঘন্টার মনোরম ভ্রমণের পর জলে নামা থেকে বিরত থাকতে পারেন না কেউই। অনেকেই সদলবলে মেতে ওঠেন জলকেলিতে। ঠন্ডা জলের স্পর্শে নিজেকে মাতিয়ে রাখেন। বিছনাকান্দিতে ঘুরতে আসা এ ইউ এম মান্না ভূঞা জানান, তিনি এসছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। বন্ধুদের সাথে এবারই প্রথম এসেছেন তাই বিছনাকান্দির সৌন্দর্যে মুগ্ধ তিনি। নাজমুল হাসান বলেন, এতো সুন্দর জায়গা আমাদের আশেপাশে আছে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতাম না। ছবির মতো এমন সুন্দর জায়গাটিকে সরকার চাইলে একটি উন্নত পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এখানে ভালো মানের কোনো হোটেল নেই। পাবলিক টয়লেট বা ওয়াশ ব্লক নেই। তাছাড়া রাস্তার অবস্থাও খারাপ। এসব দিকে নজর দিলে আমাদের মতো দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদেরও আরো বেশি আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে।
জাফলং, লালাখাল, বিছনাকান্দির মতো রাতারগুলেও প্রচুর পর্যটক এসেছেন এবার। নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর ওয়াচ টাওয়ার থেকে বনের সৌন্দর্য অবলোকনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। এছাড়াও মালনিছড়া, লাক্কাতুরা, জাফলং চা বাগানেও পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, প্রতিটি ঈদেই গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল, বিছনাকান্দি, জাফলংয়ে পর্যটক সমাগম বেশি হয়। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবারও। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি রাখা হয়েছে উদ্ধারকারী দল। এছাড়া পর্যটকদের জন্য বিশেষ হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। বিভিন্ন স্পটে ভাড়ার তালিকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে সিলেটের পাশপাশি সুনামগঞ্জেও পর্যটকদের আগমন লক্ষ্যণীয়। হাজার হাজার পর্যটক এসেছেন টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলদ্রি লেক, যাদুকাটা ও লাউড়ের গড় এলাকার সৌন্দর্য দেখতে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঈদের ছুটিতে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হাওরবেষ্টিত ভাটির জনপদ ও পর্যটন এলাকাখ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা। হিজল-করচ, নলখাগড়া বেষ্টিত নীল জলরাশির টাঙ্গুয়ার হাওর, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর বিক্রম শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রী লেক), রূপের নদী যাদুকাটা ও প্রয়াত চেয়ারম্যান হাজি জয়নাল আবেদীনের শিমুল বাগানে হাজারো পর্যটকের ঢল নেমেছে।
কথা হয় সারোয়ার আলমের সাথে। তিনি সপরিবারে বেড়াতে এসেছেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। তিনি বললেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ এ উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ছবি দেখে ঈদের ছুটিতে এখানে বেড়াতে আসলাম। অনেক ভালো লেগেছে। প্রতিটি স্থানই আলাদা, প্রকৃতির এ অপরূপ শোভা দেখে আমি মুগ্ধ।