টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধ করার সিদ্ধান্তের সংবাদে আমরা একদিকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে জনশক্তি রফতানিতে একচেটিয়া ও সিন্ডিকেটভিত্তিক অনৈতিক ব্যবসা বন্ধ করতে মালয়েশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাই। কারণ এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে আবার অভিবাসী কর্মী পাঠানোর সুষম সুযোগ তৈরির পথ সুগম হয়েছে। তবে এটাও পরিষ্কার যে, এ সুযোগ গ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুরো খাতকে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করা এবং যারা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।’
‘আমরা ব্যবসাটিকে বাংলাদেশের সব এজেন্টদের জন্য খুলে দিতে চাই’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সূত্র ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যে প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন নিশ্চিত করার টিআইবির দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে টিআইবির আশঙ্কাই সত্য বলে প্রতীয়মান হলো। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত টিআইবির একটি গবেষণায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে পরে মালয়েশিয়াসহ অন্য দেশে অভিবাসী কর্মী প্রেরণে একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন ও গ্রাহকদের শোষণ প্রক্রিয়া রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে সরকারকে একটি পলিসি ব্রিফও করে টিআইবি। এর আলোকে যথাসময়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গৃহীত হলে অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধ করার মতো এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’
বিবৃতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধের এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট স্বল্পতম সময়সীমার মধ্যে অভিবাসী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ সিন্ডিকেটমুক্ত করে উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যয় নির্ধারণ করে আবার শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাংলাদেশকেই উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে বিশাল এ শ্রমবাজারের, যা বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির জন্য সীমাহীন গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্স অর্জন বাধাগ্রস্ত করবে। টিআইবি উদ্বিগ্ন বিশেষ করে এ কারণে যে, যে সিন্ডিকেটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার কর্ণধার এবং তাদের কার্যক্রম ও প্রভাব সম্পর্কে সরকারের অবগত না থাকার কথা নয়, অথচ দীর্ঘদিন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পেরেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে এখন সুযোগ এসেছে অভিবাসন খাতকে সিন্ডিকেট ও যোগসাজশের দুর্নীতির গ্রাস থেকে মুক্ত করার। তাই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সদিচ্ছা প্রমাণের এখনই সুযোগ বলে মনে করে টিআইবি।’