বিসিসিআই নয়, সিএবি। আরব সাগরের তীরে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডে নয়, আপাতত গঙ্গাপারের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলই ঠিকানা থাকছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। অন্তত, এই মুহূর্তে তেমন ভাবনাই রয়েছে সাবেক জাতীয় অধিনায়কের।
সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরও দু’বছর মেয়াদ রয়েছে সৌরভের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে— ছয় বছর পদে থাকার পর ‘কুলিং অফ’ বাধ্যতামূলক। সৌরভ তাই চটজলদি কিছু করতে চাইছেন না। বাড়তি আক্রমণাত্মক না হয়ে,নিজের রক্ষণ জমাট রাখতে চাইছেন। ইনিংসের শুরুতে, বিরাট কোহালির মতোই অফস্টাম্পের বাইরের ‘করিডোর অফ আনসার্টেনটি’ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে চাইছেন। অপেক্ষায় থাকছেন সঠিক সময়ের।
চলতি বছরের শেষের দিকে বোর্ডে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেখানে যদি সৌরভ নির্বাচিত হন, তবে বছর দুয়েকের জন্য বোর্ডের পদাধিকারী হবেন। প্রেসিডেন্ট বা সচিব যাই হন, মেয়াদ ওই দুই বছরই। তার পর ছেড়ে দিতে হবে। বেহালার বঙ্গসন্তান এটাই চাইছেন না। বোর্ডে ইনিংস খেলতে নামলে দুই বছর পরে ডিক্লেয়ার করার বিধিনিষেধের গেরোয় পড়তে চাইছেন না একেবারে। বরং, বোর্ডে যদি যাই, তবে পুরো তিন বছরের জন্যই যাব, ঘনিষ্ঠ মহলে এমনই বার্তা দিয়েছেন তিনি।
সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েকের মধ্যে হতে চলা নির্বাচনে বিরোধী গোষ্ঠী বলে কাউকে দেখতে পাওযার সম্ভাবনা কার্যত নেই। সৌরভ শিবির এখন বাস্তবে নিষ্কণ্টক। যদি তাঁর প্যানেলের কাউকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠেও আগামী দিনে, আরও বছর দুয়েক সৌরভের সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকা নিশ্চিত। তাঁর বিরুদ্ধে লড়ার কথা কেউ এখনও ভাবছেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তিনি সিএবির সচিব হয়েছিলেন। জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। সেই হিসেবে চার বছর ধরে তিনি সিএবির পদাধিকারী। মোট ছয় বছর কাটিয়ে তিনি তিন বছরের কুলিং অফের পর ঝাঁপাতেই পারেন বোর্ড প্রধান হওয়ার দৌড়ে।
এমনিতে বোর্ডের সংবিধান যা, তাতে বোর্ডে পদাধিকারী হওযার রাস্তায় কাঁটা নেই, ফুলই বিছানো রয়েছে সৌরভের সামনে। অন্তত তিনটি বার্ষিক সাধারণ সভায় হাজিরা দেওয়ার নিয়মও তাঁর পক্ষে। যা অনেক নবীন কর্তাদেরই থাকার কথা নয়। ফলে, সিএবির মতো বোর্ডেও থাকছে গ্রিন সিগন্যাল। পদাধিকারী হতে অন্তত লর্ডসে জেমস আ্যন্ডাসনের সুইং সামলানোর টেকনিক লাগবে না। প্লেয়িং কন্ডিশনই বরং এমন যে, বল সুইংই করছে না। তবু এখনই বোর্ডে যেতে অনীহা রয়েছে তাঁর।
বোর্ডের অন্দরে অবশ্য আরও একটা সমীকরণ ভাসছে। তিন বছরের ‘কুলিং অফ’ নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেক মহলে। নতুন সংবিধান অনুসারে সব কিছু হওয়ার পর, এটা নিয়ে ফের আইনি লড়াইয়ের পথেও যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি সত্যিই তা হয়, যদি সর্বোচ্চ আদালতে স্বেচ্ছা-নির্বাসনের নিয়ম শেষ পর্যন্ত উঠে যায়, তবে তা সৌভাগ্য হিসেবে দেখা যেতেই পারে। কারণ, সে ক্ষেত্রে সৌরভকে ‘কুলিং অফ’ নিয়মের গেরোয় আটকে পড়তেই হবে না। সিএবি-র পাট চুকিয়ে তিনি মহারাজকীয় ভঙ্গিতে পা রাখতে পারেন বোর্ডে। এবং ক্রিকেট প্রশাসনে টানা নয় বছর কাটাতে পারবেন।
আর সচিব-টচিব নয়, বোর্ডে একটা পদ নিয়েই ভাবতে রাজি সৌরভ। প্রেসিডেন্ট পদ। ঘনিষ্ঠ মহলে তা জানিয়েওছেন। তাতে যদি দেরি হয় তো হোক না, তাড়াহুড়োর পক্ষপাতী নন তিনি।