দেশের আর্থিক খাতে যেকোনো সময় আবারও ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি টিম না থাকায় আন্তর্জাতিক হ্যাকাররা সহজেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য চুরি করছে ।
এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তথ্য চুরির ঘটনা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে বেশকিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশ হয়েছে। এ ধরনের হ্যাকিংয়ে পেমেন্ট সিস্টেমস হ্যাক করে দেশের ভেতরে ও বিদেশে থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ ধরনের সাইবার সিকিউরিটি ও হ্যাকিং সংক্রান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে।
এ অবস্থায় সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থার নিরাপত্তা বাড়াতে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ ও ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট ইস্যুকৃত প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়।
অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, বর্তমান সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ এর লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বর্ণিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের জন্য প্রণীত সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) কর্তৃক সাইবার নিরাপত্তা টিম গঠন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাইবার সেন্সর স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত সেন্সর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পরিলক্ষিত হয় যে, ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারসমূহে সাইবার অপরাধীরা ম্যালওয়্যার স্থাপন করেছে, যা ব্যবহারকারীর অগোচরে ব্যবহারকারীর পরিচয় ও পাসওয়ার্ড কাজাকিস্তান, রোমানিয়া, জাপান ও চীনে চিহ্নিত অপরাধীদের কাছে সংবেদনশীল তথ্য অনবরত প্রদান করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি টিম না থাকায় এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এরূপ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সাইবার নিরাপত্তা টিম গঠনসহ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মোস্তাফা জব্বার তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
এর পরেই অর্থমন্ত্রী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রীর চিঠির গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে চিঠে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বেশ কয়েকটি জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। এর মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফেরত এলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে এখনো তেমন অগ্রগতি নেই।
বহুল আলোচিত এই সাইবার চুরির পেছনে কারা জড়িত, তা এখনো জানা যায়নি। এই রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে অনেক আগে জমা দিলেও এখন পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি। এর মধ্যে সরকার নিউইয়র্কের সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে এর আগে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।