ধর্মযাজকদের হাতে আয়ারল্যান্ডের শিশুদের যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে বলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী— জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। সঙ্গে বলেছেন, ন্যায়বিচারের আশা তিনি রাখেন।
আয়ারল্যান্ডের মেয়ো প্রদেশের নক গ্রামে মেরির নামে ধর্মস্থান। সফরের দ্বিতীয় দিনে সেখানে পোপ বলেন, ‘‘যারা নিগ্রহের শিকার, তাদের শৈশব কেড়ে মনে যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতির ক্ষত তৈরি করা হয়েছে। ওদের কথা শুনে কার মন না উতলা হয়! রোমান ক্যাথলিক চার্চ নিগ্রহের যে দগদগে ক্ষত তৈরি করেছে, তা চার্চের সততা এবং ন্যায়বিচার অনুসন্ধানের পথকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।’’
পোপ দ্বিতীয় জন পলের পরে গত ৩৯ বছরে এই প্রথম ফের কোনও পোপ পা ফেললেন আয়ারল্যান্ডে। ক্যাথলিক পরিবারগুলি তিন বছরে এক বার মিলিত হয়, ‘ওয়ার্ল্ড মিটিং অব ফ্যামিলিজ়’ অনুষ্ঠানে। সেই উপলক্ষেই পোপের আয়ারল্যান্ড সফর। কিন্তু তা আগাগোড়াই ঢেকে ছিল শিশু-নিগ্রহ বিতর্কে। রবিবার ছিল মেরির কাছে প্রার্থনার দিন। বৃষ্টি আর ঠান্ডা উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় আর রেনকোটে ভিড় জমান বহু মানুষ। পোপ তাঁদের জন্য প্রার্থনা আর আশীর্বাদের ফাঁকেই আবার মনে করালেন সেই নিগৃহীত শিশুদের কথা, যাদের সঙ্গে সফরের প্রথম দিন, অর্থাৎ শনিবার প্রায় নব্বই মিনিট কাটিয়েছেন তিনি।
তার আগে ডাবলিন কাসলে রাজনৈতিক নেতা ও অন্য অতিথিদের সামনে পোপ বলেন, ‘‘আয়ারল্যান্ডে চার্চের যে সদস্যদের হাতে শিশুদের সুরক্ষা এবং শিক্ষার ভার, তাঁরাই শিশুদের নিগ্রহের পিছনে জড়িত— এই ভয়ঙ্কর ঘটনা আমার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। বিশপ থেকে শুরু করে সব স্তরে ধর্মগুরুরা যে ভাবে প্রশ্নের মুখে, তাতে ক্ষোভ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ক্যাথলিকদের পক্ষে এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং বেদনাদায়ক। আমি সেই ভাবাবেগ বুঝতে পারছি।’’ পোপের আগে ‘আধুনিক-মনস্ক’ আইরিশ প্রধানমন্ত্রী লিয়ো ভারাডকর সরাসরি চার্চ, রাষ্ট্র এবং বৃহত্তর অর্থে সমাজের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘এ সবের ফলে একটা তিক্ত এবং ভঙ্গুর ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে। বহু মানুষ যন্ত্রণার সেই ঐতিহ্য বয়ে চলেছেন।’’
পোপ শুনেছেন সেই সব বাচ্চার কথাও যাদের ক্যাথলিক ধর্মগুরুদের নির্দেশে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে জোর করে দত্তক দেওয়া হয়েছে। কারণ ওদের মায়েরা অবিবাহিত ছিলেন। এই শিশুদের পরে ধোপাখানার মতো নানা জায়গায় কাজে লাগানো হয়। এমনই এক শিশু ক্লোডাগ ম্যালোনের দাবি, পোপ ফ্রান্সিস তাদের কথায় স্তম্ভিত হয়ে যান। ম্যালোন বলেছে, ‘‘উনি প্রত্যেকের কথা শ্রদ্ধা আর সহানুভূতির সঙ্গে শুনেছেন।’’
না-পাওয়ার ভাঁড়ারে পূর্ণ এমন অনেক শিশু পোপের কাছে আবেদন জানায়, তিনি যেন রবিবার তাদের মায়ের উদ্দেশে বলেন, তাঁরা পাপ করেননি। যদিও গির্জার অফিসাররা তেমনটাই বুঝিয়েছিলেন। এক সময়ের দত্তক-শিশু পল রেডমন্ড এখন পরিণত। বললেন, ‘‘অসংখ্য বৃদ্ধা ও প্রবীণার জন্য এটা বিরাট পদক্ষেপ। বিশেষত আয়ারল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলে অনেক মহিলা ৪০-৫০-৬০ বছর ধরে ভয় নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন।’’