কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনের তথ্য ভিত্তিহীন : তদন্ত কমিশন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইউবিজি-২১১ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইলটের ওপর দায় চাপিয়ে নেপালি দৈনিক কাঠমাণ্ডু পোস্টে প্রকাশিত সংবাদকে ভিত্তিহীন দাবি করেছে তদন্ত কমিশন।

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশন সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দায়িত্বহীন এমন খবর প্রকাশে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নেপালের তদন্ত কমিশন বলছে, বিমান বিধ্বস্তের সম্ভাব্য কারণ জানতে কমিশনের তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। দুর্ঘটনা তদন্ত কশিনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিমানটির বিধ্বস্তের প্রকৃত কারণ শনাক্ত এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থার সুপারিশ করা। কমিশন বিশ্বাস করে দুর্ঘটনার তদন্ত কাজ গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডা চালানোর বিষয় নয়।

অনৈতিক ও প্রতারণামূলক এ ধরনের খবর প্রকাশের বিরুদ্ধে কমিশন ঘোরতর আপত্তি প্রকাশ করছে; যা সংশ্লিষ্ট মানুষ ও জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে।

এদিকে, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট পত্রিকায় পাইলটকে নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে তার তথ্যগুলো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষও।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বলছে, ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে গঠিত তদন্ত কমিটি অফিসিয়ালি এখনো কোনো তদন্ত প্রতিবেদন বা কোনো বক্তব্য প্রদান করেনি। এছাড়া, নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এই দুর্ঘটনার বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন।

সোমবার ইউএস-বাংলা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউএস বাংলার বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বেপরোয়া ছিলেন। অবতরণের সময় তিনি কন্ট্রোল টাওয়ারকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছিলেন। ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর এক ঘণ্টার যাত্রাপথে ককপিটে বসে অনবরত ধূমপান করছিলেন পাইলট। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, যা ভিত্তিহীন বলে দাবি করে ইউএস–বাংলা।

আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী (আইকাও কর্তৃক প্রণোদিত) যেকোনো দুর্ঘটনা পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ধরনের অসমর্থিত মতামত প্রকাশ কোনো গণমাধ্যমের কাছেই কাম্য নয়। আইকাও এর এনেক্স ১৩ এর নিয়ম অনুসারে, নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এই দুর্ঘটনা বর্তমানে তদন্তাধীন। একটি দুর্ঘটনা তদন্তাধীন অবস্থায় এই ধরনের একটি প্রতিবেদন দুটি অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। এক- অযাচিতভাবে এয়ারলাইন্স এবং ক্রুদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা, দুই- দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণকে আড়াল করার চেষ্টা করা।

সংস্থাটি আরো বলছে, এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত কোনো তথ্যের ভিত্তি নেই। এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে গঠিত তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনো তদন্ত প্রতিবেদন বা কোনো বক্তব্য প্রদান করেনি।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ সোমবার ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন কেবিন ক্রুসহ ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে। উড়োজাহাজটি নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ জন নিহত হন৷ তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি৷ এ ঘটনায় ২০ জন বেঁচে যান। ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে।

এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে দুই দেশ এখনো তদন্ত করছে এবং এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে গঠিত তদন্ত কমিটি অফিসিয়ালি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন বা কোনো বক্তব্য প্রদান করেনি, সেটি কীভাবে সে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আমাদের প্রশ্ন। আমরা মনে করি, এই প্রতিবেদন দূরভিসন্ধিমূলক এবং আমরা আমাদের সম্মানিত যাত্রীদের ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের এ ধরনের মনগড়া ও ভিত্তিহীন রিপোর্টে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে