চারপাশের বায়ুদূষণে একজন সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিকের আয়ু প্রায় প্রায় ২২ মাস কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গবেষকরা।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বাতাস আরও পরিষ্কার করা গেলে সারা বিশ্বে, বিশেষত বাংলাদেশের মানুষের আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
এই প্রথমবারের মতো বায়ুদূষণের সঙ্গে মানুষের আয়ু নিয়ে একসঙ্গে গবেষণা করা হলো। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের বাতাসের দূষণ সেসব এলাকার মানুষের আয়ুকে কিভাবে প্রভাবিত করে তা পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিনের গবেষকরা বাতাসে ২.৫ মাইক্রোনের চেয়ে ছোট কণা বা পিএমের উপস্থিতি পরীক্ষা করেন। ‘পিএম ২.৫’ বলে পরিচিত এসব কণা ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এসব কণা হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
পাওয়ার প্ল্যান্ট, গাড়ি, ট্রাক, আগুন কৃষিকাজ ও শিল্প কারখানা থেকে পিএম ২.৫ নির্গত হয়।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লেটারস-এ বুধবার প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মতো বিশ্বের ‘সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর’ মানুষ দূষিত বাতাসের কারণে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গবেষকরা দেখতে পান, পরিবেশের পিএম২.৫-এর কারণে বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৮৭ বছর তথা ২২ মাস কম বেঁচে থাকেন।
বায়ুদূষণের ফলে মানুষের আয়ু মিশরে ১.৮৫ বছর, পাকিস্তানে ১.৫৬ বছর, ভারতে ১.৫৩ বছর, সৌদি আরবে ১.৪৮ বছর, নাইজেরিয়ায় ১.২৮ বছর, এবং চীনে ১.২৫ বছর কমছে বলে জানান গবেষকরা।
বিজ্ঞানীরা প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে এবং সামগ্রিকভাবে গোটা বিশ্বে বায়ু দূষণের প্রভাব খতিয়ে দেখেন।
গবেষণা দলের প্রধান যশুয়া আপ্টে বলেন,‘আমরা দেখতে পেয়েছি- বায়ুদূষণ মানুষের আয়ুর ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। এর কারণে সারা বিশ্বের মানুষের আয়ু প্রায় এক বছর কমে যাচ্ছে’।
অন্যান্য যেসব বিষয় মানুষের বেঁচে থাকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে গবেষণাটি আরও গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে।
‘ফুসফুস ও স্তনের ক্যানসার নিরাময়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করলে যত মানুষের উপকার হবে, তার চেয়ে বেশি মানুষ বায়ু দূষণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত’ বলেন আপ্টে।
এশিয়ার বেশিরভাগ এলাকা থেকে প্রাণঘাতী বায়ুদূষণ দূর করা গেলে ৬০ বছর বয়সীদের ৮৫ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বিশেষ লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।