মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আয়োজিত উন্মুক্ত ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানানো হয়। সভাটির আয়োজক ছিল নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাজ্য।
ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ্ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক মাহমুদ আহমাদের সভাপতিত্বে উন্মুক্ত এই ব্রিফিং অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ, ইউএনডিপি’র অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর তেগেগনিঅর্ক গেট্টু এবং ইউএনএইচসিআর’র শুভেচ্ছা দূত ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী মিজ্ কেইট্ ব্লানশেট। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের বাইরে এই সভায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বক্তব্য রাখে।
জাতিসংঘ মহাসচিব গত জুলাই মাসে কক্সবাজার সফরকালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের যে মর্মস্পর্শী বর্ণনা শুনেছেন তা এই সভায় তুলে ধরে বলেন, ‘ইতোমধ্যে এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সমস্যা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। নিরাপত্তা পরিষদ প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট গ্রহণে একতা দেখিয়েছিল, এই একতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন যদি যথাযথ কাজের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দাবী পূরণ করতে চাই।’
মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা পুনরুল্লেখ করে জাতিসংঘ এবং এর বিভিন্ন সংস্থাসমূহকে রাখাইন প্রদেশে বাধাহীন প্রবেশাধিকার দেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। একবছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ব্যক্তিগত পদক্ষেপসহ জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলোর উল্লেখ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
ইউএনএইচসিআর এর শুভেচ্ছা দূত কেইট্ ব্লানশেট বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতভেদের উর্ধ্বে উঠে নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্যকে কাজ করার আহ্বান জানান ব্লানশেট।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন গত একবছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে রেখে সমাধানে কাজ করে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রদূত মাসুদ গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সুপারিশমালার ভিত্তিতেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের পদক্ষেপসমূহের টেকসই বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও উদারভাবে এগিয়ে আসতে হবে তা না হলে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিবে।’
