সু চির ‘উচিত ছিল পদত্যাগ করা’ : জেইদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জাতিসংঘের বিদায়ী হাই কমিশনার জেইদ রা’দ আল হুসেইন বলেছেন, রাখাইনে গত বছর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার বাহিনীর বর্বর ও নৃশংস অভিযানের ঘটনায় অং সান সু চির পদত্যাগ করা উচিত ছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জেইদ বলেছেন- নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সু চির যেভাবে মিয়ানমার বাহিনীর অভিযানের পক্ষে অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন তা ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’।

রাখাইনে সম্ভাব্য গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের বিচারের সুপারিশ করে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেইদ এই মন্তব্য করলেন।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মিয়ানমার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। তবে ‘কৌশলগতভাবে জাতিগত নিধন’ অভিযানের জন্য অভিযুক্ত মিয়ানমার বাহিনী এর আগেও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে।

জাতিসংঘ কমিশনের সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে, রাখাইনে ব্যাপকহারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, সেখানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার বাহিনীর অভিযানের উদ্দেশ্যই ছিল গণহত্যা। এ জন্য মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে রাখাইনে মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ ছয় জেনারেলের বিচারের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা বন্ধে সেনাবাহিনীর রাশ টানতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ব্যর্থ হয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদায়ী হাই কমিশনার বলেন, তিনি (সু চি) যে অবস্থানে আছেন, সেখান থেকে কিছু করতে পারতেন। তিনি চুপ করে থাকতে পারতেন- অথবা আরও ভালো হতো, তিনি যদি পদত্যাগ করতেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাদের মুখপাত্র হওয়ার কোনো দরকার ছিল না সু চির। তার বলা উচিৎ ছিল না যে, ‘এসব (রাখাইনে বর্বর অভিযান) বড় ধরনের তথ্যগত বিভ্রান্তি, এগুলো সব বানানো।’

তিনি বলতে পারতেন, ‘দেখ আমি হয়তো, দেশের ন্যূনতম নেতা হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি, কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতিরি মধ্যে নয়’ –বলেন জেইদ।

এদিকে রোহিঙ্গাদের হত্যা-নির্যাতন থেকে মিয়ানমার বাহিনীকে নিবৃত্ত করতে কোনো চেষ্টা না করায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত সু চির নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার দাবি উঠলেও বুধবার নোবেল কমিটি বুধবার জানিয়েছে, তার পুরস্কার কেড়ে নেওয়া হবে না বলে।

গত বছর মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ভয়াবহ হামলার পর দমন অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। নৃশংসতার মধ্যে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং অগাস্ট মাস থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা সংখ্যালঘু মুসলিম। কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা রাখাইনে বসবাস করলেও তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কয়েক বছর ধরে নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ইয়ত্তা নেই।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু চৌকিতে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার হামলার অভিযোগ করে রাখাইনে অভিযান চালায় মিয়ানমার বাহিনী। তারা সেখানে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়, নারীদের ধর্ষণ করা হয় এবং নির্বিচারে গুলি করে বহু মানুষকে হত্যা করে।

মিয়ানমার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘ সময় ধরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।

এর আগে বিভিন্ন সময় প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সব মিলিয়ে কক্সবাজারে এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখের ওপরে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে