চিনের উত্তর-পশ্চিম দিকের জিজিয়াং প্রদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের অস্তিত্ব সংকটে। তাদের জোর করে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
আমেরিকা ও ব্রিটেনের সরকারি সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে প্রায় এক লক্ষ মুসলিম চিনের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন, এমনটাই জানিয়েছে সেখানকার একটি পত্রিকা ‘আটলান্টিক’।
পত্রিকাটি আরও দাবি করেছে, সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ উইঘুররা সাংবাদিকদের জানান, ‘বেশ কিছু মাস ধরেই সেখানে মুসলিমদের অন্যধর্মে দীক্ষিত করার জন্য মতদীক্ষাদান শুরু করা হয়েছে। তাদেরকে জোর করে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। নিজেদের ধর্ম ও বিশ্বাসের সমালোচনা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রতিদিন কমিউনিস্ট পার্টির নীতি-আদর্শগত গান দীর্ঘক্ষণ ধরে গাইতে বাধ্য করা হয়। শুয়োরের মাংস এবং মদ খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। যে দুটি খাবার ইসলাম ধর্মের ঘোর বিরোধী। অন্যথায় তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার এবং অনেকক্ষেত্রেই যার অনিবার্য পরিণতি মৃত্যু’।
অন্যদিকে চিন তাদের জনসংখ্যা নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। মুসলিমদের দাবী উড়িয়ে তারা জানাচ্ছেন,স্কুল বা হাসপাতালে এই ধরনের ক্যাম্পগুলি তৈরি করা হয়েছে। এদিকে সেখানকার মুসলিমরা জানাচ্ছেন তাদের ক্যাম্পগুলি গোরস্থান এলাকায় তৈরি।
পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টি একটি অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে। ‘যে সমস্ত মানুষকে পুনঃশিক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, তারা আদর্শগত অসুস্থতায় ভুগছেন। তারা ধর্মীয় উগ্রতায় বিশ্বাসী এবং তারা উগ্র জঙ্গী আদর্শের মন্ত্রে দীক্ষিত। সেজন্য তাদের হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন। ধর্মীর উগ্রতা এক ধরণের বিষাক্ত ওষুধ যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে ও মানুষের মন বিষিয়ে তোলে। যদি আমরা এই ধর্মীয় উগ্রতাকে সমূলে উৎপাটিত করতে না পারি তাহলে এটি মারণ টিউমারের মতো গোটা সমাজে ছড়িয়ে পড়বে এবং যা বাড়িয়ে তুলবে জঙ্গী হামলার ঘটনা’, এমনটাই জানিয়েছেন তারা আটলান্টিক পত্রিকা সূত্রে খবর।
এ প্রসঙ্গে জেওরগেটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিনা ইতিহাসের অধ্যাপক জেমস মিলওয়ার্ড জানান,’চিনে ধর্মীয় বিশ্বাস একটি ব্যাধির মতো’। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, বেজিং প্রায়সময়ই ধর্মীয় উগ্রতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের পক্ষে ইন্ধন জোগায়। জেমস মিলওয়ার্ড আরও বলেন,’ এজন্যই তাদের পুনঃশিক্ষাকেন্দ্রে আহ্বান জানানো হচ্ছে,এই হাসপাতালে তাদের অসুস্থ চিন্তা-ভাবনাকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে তাই উইঘুর সম্প্রদায়ের সকল মানুষকে ডাকা হয়েছে। জটিল রোগের প্রতিষেধকের মতো এই জটিল ধর্মীয় উগ্রতার জন্য এটি অনেকটা টীকাকরনের মতো। তবে এজন্য মানুষের জীবন বিপন্ন করা সঠিক নয়’।
চিন ভয় পাচ্ছে এই ভেবে যে উইঘুররা যদি জিজিয়াং-কেই তাদের স্থায়ী বাসস্থানে পরিণত করে তাহলে কি হবে? প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে একটি হিংসার ঘটনায় প্রায় একশজন মানুষের মৃত্যু হয়। এদিকে চিনা প্রশাসন সূত্রে খবর, উইঘার সম্প্রদায়ের বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রতাকে দমন করা না গেলে দেশের দুর্দিন অদুরে নেই।