সরকারেই থাকতে চান এরশাদ ও রওশন

ডেস্ক রিপোর্ট

আগামী নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক তার সঙ্গে যে কোন মূল্যে সরকারে থাকতে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী নেতা রওশন এরশাদ। বৃহত্তর জোট করে সম্ভব হলে সরকার গঠনের ইচ্ছা রয়েছে তাদের, না পারলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জোট করে হলেও সরকারের অংশ হবে জাতীয় পার্টি। কিন্তু কোনভাবেই আর বিরোধী দলে থাকতে চান না এরশাদ। একই মনোভাব স্ত্রী রওশন এরশাদেরও।

বুধবার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের এমন কথাই সাফ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।

universel cardiac hospital

আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজধানীর বনানীতে তার কার্যালয়ে দলের প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের নিয়ে যৌথসভা করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

নেতাদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, ‘ভালভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নাও। এবার আগের মত, আগের পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে না। বৃহত্তর জোট করে নির্বাচন হতে পারে। যুক্তফ্রন্টের আদলেও সরকার আসতে পারে। সর্বদলীয় সরকারও হতে পারে, তবে যে পদ্ধতিতেই নির্বাচন হোক, সরকার আসুক, এবার আমরা সরকারে থাকতে চাই। আর বিরোধী দলে থাকবো না।’

এর আগে বিরোধী নেতা রওশন এরশাদ পার্টির চেয়ারম্যানের বিরোধীতা করে বলেন, ‘আমরা কেন অন্যের কাছে আসন চাইব, মন্ত্রিত্ব চাইব? এবার আমরা কারো কাছে যাব না, ক্ষমতার সিড়ি হব না। ভিক্ষা নেব না, দেবও না। যার দরকার হবে আমাদের কাছে আসবে। তখন প্রয়োজনে সমঝোতা হবে। এবার আমরাই সরকার গঠন করতে চাই। জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্যই।’

এসময় মঞ্চে উপস্থিত এরশাদসহ দলটির নেতারা করতালি দিয়ে রওশনের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানান।

পরে বক্তব্য দিতে ওঠে এরশাদ তার স্ত্রী রওশনের নির্বাচনী অবস্থান ও বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, ‘তার (রওশন) কথায় আমি উৎসাহিত হয়েছি। এবার আমরা সরকার গঠন করব। কারো কাছে যাব না। যে দলই ক্ষমতায় আসুক আমরা সরকারে থাকতে চাই। আর বিরোধী দলে থাকতে চাই না।’ এসময় এরশাদ দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাবও দেন।

এর আগে দলের সিনিয়র নেতারা পার্টির চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মহাজোট গঠন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলেও তারা কথা রাখেনি। তাই এবার যার সঙ্গেই জোট হোক না কেন, আগে সবকিছুর ফয়সালা করে নিতে হবে। আসন ভাগাভাগি থেকে শুরু করে সরকার গঠন কীভাবে হবে, কয়টি মন্ত্রীর পদ থাকবে, সব বিষয়ে ফয়সালা করে নির্বাচনে যেতে হবে।

জবাবে এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচনী জোট যার সঙ্গে হোক না কেন, এবার সবকিছু হিসাব করেই জোট হবে। নির্বাচনের আগেই সবকিছুর ফয়সালা করা হবে।’

যৌথসভায় নেতারা এখনই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার অনুরোধ জানান এরশাদকে। নেতাদের কেউ কেউ বলেন, ‘স্যার গ্রিন সিগন্যাল দিলে আমরা এখনই মাঠে নেমে পড়ব।’

কিন্তু কৌশলি এরশাদের বক্তব্য হলো, এখনই সময় হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের জন্য আহ্বান করা হবে, বায়োডাটা নেওয়া হবে। তখন যারা ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ইন্টারভিউতে এরশাদের মন জয় করতে পারবেন তাদেরকেই চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে নেতাদের উদ্দেশ্যে এটাই ছিল এরশাদের জবাব। পার্টির চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে নেতারা নাখোশ হয়েছেন।

যৌথসভায় এরশাদ, রওশন এরশাদ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভ রায়, এস এম ফয়সল চিশতি, সোলেয়মান আলম শেঠ, এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা, মুজিবুল হক চুন্নু, নুর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মেজর অব: খালেদ আখতার, আজম খান মুজিবুল হক সেন্টু, আব্দুর রশীদ সরকার, ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, মাসুদা এম এ রশিদ চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, পীর মেজবাহ এমপি, জিয়াউল হক মৃধা এমপি, নুরুল ইসলাম মিলন এমপি, নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, ইয়াহহিয়া চৌধুরী, সেলিম উদ্দীন এমপি।

জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও তারা বক্তব্য রাখেননি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে