খালেদা জিয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট

ফাইল ছবি

আদালতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করায় বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধী এবং পলায়নপর মনোবৃত্তি থাকাতেই তিনি বিচারের মুখোমুখি হতে চাচ্ছেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া গত ছয় মাসে একবারও আদালতে হাজির হননি এবং আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন তিনি আর আদালতে আসবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন ‘এটা কি ধরনের কথা, কোন নাগরিক, যিনি আইন ও সংবিধান মেনে চলেন তিনি কি এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন?’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ছয় মাসে কয়েকবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া একবারও এই মামলায় আদালতে হাজির হননি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রীর অপরাধ মানসিকতার জন্যই তিনি বিচার এড়িয়ে চলছেন।
‘তার (খালেদা জিয়া) পলায়নপর মনোবৃত্তি রয়েছে এবং সেভাবেই তিনি চলছেন, এটা হচ্ছে বাস্তবতা’।

খালেদা জিয়ার ক্যামেরা ট্রায়াল করা হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগ খন্ডন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা কোন ক্যামেরা ট্রায়াল নয়।
তিনি বলেন, ‘এটা ক্যামেরা ট্রায়াল নয়। পুরো দরজা খোলাই ছিল। তাদের কোনো কোনো আইনজীবী গেটে গিয়ে বসেছিল। কিন্তু কোর্ট রুমে ঢুকেনি। তারা আশপাশে বসেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) নড়াচড়া করতে অসুবিধা। সে ভেতরে থাকে সেখান থেকে জেলখানায় আসবে। তাই ওখানে কোর্ট বসেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে প্রশ্ন করেন ‘অবাধে সবাই যাতায়াত করতে পেরেছে এটা ক্যামেরা ট্রায়াল হলো কীভাবে?’
জেলগেটে আদালত বসা কোন নতুন ঘটনা নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতেও বহুবার জেলগেটে আদালত বসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে কর্নেল তাহেরের বিচারের জন্য জিয়াউর রহমানের জেলগেটে আদালত বসানোর কথাও উল্লেখ করেন।
কারাগারে আদালত বসানোকে অসাংবিধানিক দাবি করায় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে দলের জন্ম হয়েছে অসাংবিধানিক উপায়ে। সংবিধান লঙ্ঘন করে দল গঠনকারী যারা তার কাছে আমাদের সংবিধান শিখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তার মানে জিয়া অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিল বলে সে জেলগেটে বিচার করতে পারবে, বাকিরা পারবে না? তারা (বিএনপি) যদি সেটা বোঝাতে চায় তো বলুক।’
আদালত কক্ষে আইনজীবীরা কেন গেলেন না, এই প্রশ্ন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে আমরা কী মনে করব? যে প্যানেল জানে খালেদা জিয়া দোষী? তাকে ডিফেন্ড করে খুব বেশি লাভ হবে না? তাই কোনো ছুতো ধরে তারা বোধ হয় তাকে আর ডিফেন্ড করতে চায় না?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত যথার্থই খালেদা জিয়াকে শস্তি দিয়েছে। কারণ সে এতিমদের টাকা এতিমদের দেয়নি বরং আত্মসাৎ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেলখানায় একজন পরিচারিকাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা সংবিধানে নেই এবং এ ধরনের কোন উদাহরণও দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা এক ধরনের অপরাধ, কারণ একজন নিরাপরাধ মানুষকে জেলে রাখার অধিকার কারো নেই।
জনগণ সরকারের ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে তা তাঁর বিশাল অর্জন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। কারণ আমরা তাঁদের কল্যাণের জন্যই কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট থেকেছি।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের জরিপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশে আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ তারা জনগণের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে।’
এমনকি পাকিস্তান পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা স্বীকার করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণই এখন বলছে আমরা বাংলাদেশের মত হতে চাই। কাজেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনকেও স্বাগত জানান।
তাঁর সরকারের বিগত প্রায় এক দশকের শাসনামলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উন্নয়নের ধাররাবাহিবতা রক্ষার স্বার্থে আওয়ামী লীগকে আবার ভোট দিয়ে জনগণ নির্বাচিত করবে এবং জনগণ নিজ স্বার্থেই তা করবে ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে