একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনে জামায়াত ইস্যু এবং আসন ভাগাভাগি ‘বড় বাধা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে জামায়াত ইস্যু সুরাহা না হলেও আসনের ক্ষেত্রে ‘বড় ধরনের ছাড়’ দিতে যাচ্ছে মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি।
এ নিয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা একাধিক বৈঠক করে খসড়া প্রস্তবনাও তৈরি করেছেন যা দলের হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতন আন্দোলন গড়ে তুলতে ২০ দলীয় জোটের বাইরে বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ষদিন ধরেই আলোচনা করে আসছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে জামায়াতকে জোটে রাখা না রাখা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে বারবার থমকে যায় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।
তবে এবার আর জামায়াত ইস্যুকে বড় করে দেখা হচ্ছে না। জোটগত হিসেবে না গিয়ে বিএনপি দলগতভাবে জাতীয় ঐক্যে যোগ দেবে। এছাড়া ভারসাম্যের সরকার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনী আসন বণ্টন নিয়েও আছে দরকষাকষি। তবে সব কিছু ছাপিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে চায় বিএনপি। প্রয়োজনে শতাধিক আসন জোটের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মত ও পথকে জানান, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার জন্য একটি খসড়া প্রস্তবনা তৈরি করা হয়েছে। এটি দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা কয়েক দফা বৈঠক করে চূড়ান্ত করেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই তা দৃশ্যমান হবে।
এছাড়া জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, জামায়াত এখন আর বড় ইস্যু নয়।বিভিন্ন সময় জামায়াতকে সামনে নিয়ে এসে মূল ইস্যু আড়াল করার চেষ্টা করা হয়। যে কারণে জাতীয় ঐক্য বাধাগ্রস্ত হয়। এবার সেই সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। জাতীয় ঐক্য গঠনের জামায়াত কোনো বাধা নয় বলে মনে করেন না তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘স্বৈরশাসককে হটাতে হলে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। সুতরাং গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষা হলে ভোটের অধিকার নিশ্চিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় অনেক বড় ছাড় দিতে হয়। এখানে বড় কথা হচ্ছে, গণতন্ত্র। আমরা যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারি, তাহলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। দেশের মানুষ অন্যায়, জুলুমের হাত থেকে রক্ষা পাবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভয়াবহ এই দানব সরকারের হাত থেকে দেশেকে রক্ষার জন্য জাতীয় ঐক্যের কথা বারবার বলে আসছি। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেই আমরা এই দানব সরকারকে পরাজিত করব।
তিনি বলেন, আমাদের সংকট হচ্ছে, গণতন্ত্রহীনতা। আমরা ক্ষমতার জন্য আন্দোলন করছি না, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে দেশনেত্রী আজকে কারাগারে। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। আমরা সেই ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি।
দলের যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের নেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগেই বলেছেন- আমাদের আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। আবার কাউকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর জন্যও নয়। একটা পদ্ধতিগত পরিবর্তননের কথা তিনি বলেছেন। তিনি ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যা যা করার দরকার তার জন্য তৈরি আছে বিএনপি। সেই মানসিকতা নিয়েই বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জাতীয় ঐক্যের বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা (বি) চৌধুরী এবং গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ কয়েকটি দলের নেতারা যৌথ বৈঠক করেন। ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের জন্য একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রমুখ।
মূলত এ ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। এর জন্য বিএনপিকে যত রকম ছাড় দেয়া লাগে তার প্রস্ততিও আছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।