আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির যৌথসভার নামে রাজধানীতে শোডাউন করতে যাচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার দল রাজনৈতিক অঙ্গনে শক্তি প্রদর্শন করতে চাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, ‘যৌথসভার নামে মূলত রাজধানীতে ছোটখাট রাজনৈতিক শোডাউন করবে জাতীয় পার্টি। কিছুদিন আগে রাজধানীর নয়াপল্টনে শোডাউন করেছিল বিএনপি। দেশের বিরোধী দল হিসেবে এর পাল্টা আমাদেরও তো কিছু করা উচিত। সেই চিন্তা থেকে মূলত যৌথসভার এই আয়োজন।’
নির্বাচনের আগে দেশ-বিদেশে ও বিভিন্ন মহলে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে দলের যৌথসভার নামে শোডাউনের এই আয়োজন করেছেন প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট এরশাদ। যৌথসভা থেকে রাজধানীতে মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচিও দিতে পারেন দলটির চেয়ারম্যান।
মূলত শোডউনের প্রস্তুতি নিয়ে আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশনে ডাকা হয়েছে দলটির যৌথ সভা। এতে এরশাদ সভাপতিত্ব করবেন। বক্তব্য রাখবেন পার্টির কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ শীর্ষনেতারা। যৌথসভা শুরু হবে সকাল ১০টায়, শেষ হবে বিকাল ৩টার আগেই।
রাজনৈতিক কোনো বড় সিদ্ধান্ত কিংবা দলের সব স্তরের মতামত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পার্টির যৌথসভা ডাকা হয়। এতে দলের কেন্দ্রীয় যৌথসভার নিয়ম অনুযায়ী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, নির্বাহী কমিটি, জেলা- উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ইউনিট এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিটি স্তরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু জাতীয় পার্টির এই যৌথসভায় শুধু শীর্ষনেতারা নন, সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা হচ্ছে।
দক্ষিণের সংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে জানান, এমপি বাবলার নেতৃত্বে তার নির্বাচনী এলাকা খেকে ৫-৭ হাজার, দক্ষিণের অন্যান্য এলাকা থেকে ৪-৫ হাজার নেতাকর্মী যোগ দেবে যৌথসভায়।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের পটুয়াখালির দুমকি ও বাকেরগঞ্জ সংসদীয় এলাকা থেকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি ও তার স্ত্রী নাসরিন হাওলাদার রত্মা এমপির নেতৃত্বে পাঁচ থেকে আট হাজার নেতাকর্মী যৌথসভায় যোগ দিচ্ছেন। লঞ্চে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
এছাড়া যৌথসভায় দলের মহানগর উত্তর থেকে সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর নেতৃত্বে তিন হাজার, ঢাকা জেলা থেকে দলীয় সংসদ সদস্য সালমা ইসলামের নেতৃত্বে তিন হাজার, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে দলের যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপির নেতৃত্বে দুই হাজার, গাজীপুর থেকে মহানগর আহ্বায়ক প্রাক্তন সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে দুই হাজার, ঢাকা-৫ থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদের নেতৃত্বে ২ হাজার, মানিকগঞ্জ-৩ থেকে দলের জহিরুল আলম রুবেলের নেতৃত্বে ৩ হাজার, চট্টগ্রাম থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠের নেতৃত্বে দুই হাজার, কুমিল্লার আমির হোসেন ভুইয়া, এমপি এহয়্যা, পীর ফজলুর রহমানসহ দলের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আগামী এমপি প্রার্থীদের নেতাকর্মী নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোও নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে যৌথসভায় যোগ দেবেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য চট্টগ্রামের প্রাক্তণ মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যৌথসভায় নেতাকর্মীরা আসলে শোডাউন হতেই পারে। এটা অন্যভাবে নেওয়ার কিছু নাই।
তিনি বলেন, যৌথসভায় সর্বস্তরের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের কাছ থেকে মতামত নেবেন পার্টির চেয়ারম্যান। নির্বাচন কিভাবে হলে সুবিধা, লাঙল সম্পর্কে এলাকার মানুষদের ধারণা কী, তৃণমূলে জয়ী হতে কী করতে হবে আমাদের, এসব বিষয়ে নেতাদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে সভায়।
এ সময় মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।