ফারুকের কারিগর দুই হুমায়ূন…

বিনোদন ডেস্ক

বাংলা নাট্য জগতের জনপ্রিয় একজন অভিনেতা ফারুক আহমেদ। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক, নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদের হাতে গড়া এ অভিনেতা সম্প্রতি দেশের প্রথমসারির ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তার অভিনয়ে আসা এবং বর্তমান হালচাল সম্পর্কে নানা কথা শেয়ার করেন।

জানা যায়, ১৯৮০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ফারুক আহমেদ। থাকতেন মীর মশাররফ হলে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়টির জাকসু ইলেকশন চলছিল। সেসময় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে আলাপ হয় তার। ফরীদি একটা থিয়েটার ওয়ার্কশপের আয়োজন করেন। ফারুক তাতে অংশ নেন। অভিনয় করেন ‘বর্ণজ্বর’ নাটকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে একটি থিয়েটার গ্রুপ গড়ে তোলা হয়। ফারুক ছিলেন সেটার সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৮৩ সালে ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন ফারুক। সেখানে তিনি হুমায়ূন ফরীদি, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, শিমুল ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আহমেদ রুবেল ও লিটু আনামের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেন। এসকল গুণী তারকাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাই পরে ফারুকের অভিনয় জীবনের প্রেরণা হয়ে দাড়ায়। প্রায় ২৫ বছর ঢাকা থিয়েটারে কাজ করেন তিনি। এই সময়কালে কীর্তনখোলা, প্রাচ্য, কেরামত মণ্ডল, চক্র ও যৈবতী কন্যার মন নাটকগুলোতে তিনি নজর কাড়েন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্স্টাস শেষ করে ফারুক আহমেদ ব্রাকসহ বিভিন্ন এনজিওতে কাজ করেন। কিন্তু চাকরিজীবন বেশিদূর আগায়নি তার। ঢুকে পড়েন টেলিভিশন নাটকে। টিভি নাটকে তিনি প্রথম নজর কাড়েন ইমদাদুল হক মিলনের ‘বড় রকমের মানুষ’নাটকে রসিকলাল চরিত্র দিয়ে। এটি ছিল নেতিবাচক চরিত্র। আরিফিন শুভ, বিদ্যা সিনহা মিম ও মৌসুমী অভিনীত ‘তারকাঁটা’ছবিতেও তাকে নেতিবাচক চরিত্রে দেখা গেছে।

টেলিভিশনে ক্যারিয়ারের শুরুর কিছুদিন পরেই তিনি হুমায়ূন আহমেদের সংস্পর্শে আসেন। অভিনয় করেন তার পরিচালিত ‘অচিন বৃক্ষ’ নাটকে। এরপর ফারুক আহমেদ, স্বাধীন খসরু ও ডা. এজাজুল ইসলামকে নিয়ে ‘তারা তিন জন’ নামে একটি সিরিজ তৈরি করেন হুমায়ূন আহমেদ। টিভির পর্দায় এই তিন কমেডিয়ানের রসায়ন চুটিয়ে উপভোগ করেন দর্শক। একসঙ্গে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন তারা।

হুমায়ূন আহমেদ ও হুমায়ূন ফরীদিই ফারুকের ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন জানান তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকে নিয়মিত লেখালেখিও করেন অভিনেতা। কাল সাপের দংশন, উচ্চ বংশ পাত্র চাই, ডিগবাজি, দুই বাসিন্দা ও পানি পড়াসহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য নাটকের কাহিনি লিখেছেন তিনি। কিছু নাটক তিনি পরিচালনাও করেছেন। বর্তমানে ‘বদরাগী বদরুল’ এবং ‘হাউ মাউ খাও’ নামের দুটি নাটক তিনি পরিচালনা করছেন।

নাটকে কমেডি চরিত্রেই বেশি দেখা গেছে ফারুক আহমেদকে। বিশেষ করে, হুমায়ূন আহমেদের প্রতিটি নাটকেই তাকে পুরোদস্তুর একজন কমেডিয়ান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে নিজেকে কমেডি অভিনেতা হিসেবে পরিচয় দিতে নারাজ ফারুক।

তিনি বলেন, ‘আমি শুধুই একজন অভিনেতা। স্ক্রিপ্টে যা লেখা থাকে, আমি শুধু সেটাই অনুসরণ করি। মানুষ হাসানো আমার উদ্দেশ্য নয়।’

তবে ফারুক অভিযোগ করেন, আমাদের দেশে কমেডি চরিত্রকে মারাত্মক অবহেলার চোখে দেখা হয়। বিশ্ব বিখ্যাত কমেডিয়ান চার্লি চ্যাপলিনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘চার্লি সর্বকালের সেরা একজন অভিনেতা। তিনি কিন্তু কমেডিয়ান।’ কমেডি চরিত্রে অভিনয় করা অন্যান্য যেকোনো চরিত্রের চেয়ে কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সিনেমায়ও কাজ করেছেন ফারুক। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় শ্যামল ছায়া, ও ঘেটুপূত্র কমলা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়া দেখা গেছে তারকাঁটা ও একাত্তরের যিশু ছবিতেও।

সম্প্রতি নাট্য অভিনেতা ও পরিচালক তৌকীর আহমেদের ‘ফাগুন হাওয়া’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এ ছবিটি আপাতত মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে প্রয়াত খল অভিনেতা হুমায়ূন আহমেদকে প্রেরণা হিসেবে মানেন ফারুক আহমেদ। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও সেলিম আলাদিনও তার অনুপ্রেরণার দুটি নাম। তবে অভিনেতা হিসেবে কাউকেই আদর্শ হিসেবে মানেন না ফারুক। বলেন, ‘অভিনয় দিয়ে আমি সব সময়ই ব্যতিক্রম কিছু দেখানোর চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে বিশেষ কাউকেই অনুসরণ করিনি।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে