জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, তফসিলের আগেই সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এসব কিছুর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।
তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। আমরা কারো দয়া ভিক্ষা করছি না। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তাকে মুক্তি দিতে হবে। সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে সব অর্জনকে তারা ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। পার্লামেন্টকে প্রহসনে পরিণত করেছে। প্রশাসন করেছে দলীয়করণ। বিচার বিভাগকেও দলীয়করণ করার ষড়যন্ত্র করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারাদেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকার ভৌতিক মামলা দিয়েছে। ১২ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার। গ্রামেগঞ্জেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে পাতা পেতে ঘুমাতে পারছে না। এভাবে মিথ্যা মামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, গুম-খুন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ক্ষুব্ধ হলে হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সরকারকে হটাতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারের দিন শেষ, জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সবাই ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখলে তাদের পতন সময়মাত্র। একটা জাতীয় ঐক্যের মধ্যদিয়ে ভয়াবহ দানব সরকারকে সরাতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং কারাগারে আদালত বসানোর প্রতিবাদে এই মানববন্ধন আয়োজন করে বিএনপি। ঢাকার মতো দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, শহর ও পৌরসভায় একই সময়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঢাকার মানববন্ধন ঘিরে সকাল থেকে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। তাদের অবস্থান একদিকে প্রেসক্লাব থেকে সুপ্রিম কোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা, অন্যদিকে পল্টন মোড় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। এতে করে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রভাব পড়েছে অন্যান্য সড়কেও। দেখা দিয়েছে যানজট।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু, সরকার তার চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা করছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার আবার ৫ জানুয়ারির মতো একটি যেনতেন নির্বাচন করতে চাইছে। এজন্য আদালত থেকে জামিন হওয়ার পরও তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। তফসিল ঘোষণার আগেই আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, আবদুল আওয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, রুহুল আলম চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নাল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবীব, যুগ্ম-মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
২০ দলের নেতাদের মধ্যে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এরপর থেকে তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
গত ৫ সেটেম্বর এই কারাগারেই আদালত বসিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ শুরু হয়েছে।