দোহারে বসবাস করেন সাহিদা বেগম। স্বামী মিজানুর রহমান ফকিরাপুলে থেকে প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি খবর পান তাঁর স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বড় ছেলেকে নিয়ে ছুটে আসেন ঢাকায়। থানায় স্বামীর দেখা না পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে আসেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। স্বামীকে দেখার পর আদালতের বারান্দায় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। স্বামীর এক দিন রিমান্ড হওয়ার আদেশ শোনার পর সাহিদা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর স্বামী কোনো রাজনীতি করে না। অথচ পুলিশ তাঁর স্বামীকে রাস্তা থেকে ধরল। এখন বলছে, তাঁর স্বামী নাকি স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী।
দোহারের মিজানুর রহমানকে রমনা থানার পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁকেসহ (মিজানুর) ১৭ জনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে রমনা থানার পুলিশ। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তাঁদের প্রত্যেকের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্র বলছে, এ ছাড়া মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর ,রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা থানার পৃথক ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার আরও ৩২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আর শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার ২২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত। আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী জানান, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীর পাশাপাশি পুলিশ নিরীহ সাধারণ মানুষকেও গ্রেপ্তার করে আদালতে তুলেছে।
মঙ্গলবার আদালতে দেখা যায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দুপুরের দিকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতের হাজতখানায় আনে পুলিশ। যাঁদের রিমান্ড চাওয়া হয় তাঁদেরকে হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হয়। রিমান্ড শুনানি শেষে যখন ফের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনদের কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনেরা আদালত ও হাজতখানার সামনে ভিড় করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলটির মানববন্ধন চলাকালে ও শেষে ধরপাকড় করে পুলিশ। সোমবার দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড়, পল্টন মোড়, সেগুনবাগিচা ও হাইকোর্ট মোড় থেকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গাজীপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে পুলিশ অতর্কিতে হামলা ও ‘গুলি’ চালিয়েছে।
মানববন্ধন চলার সময় সাদাপোশাকে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের হ্যাঁচকা টেনে ধরে নিয়ে যান। এ সময় কেউ কেউ পালাতে সক্ষম হন, আবার কোনো কোনো দলের সদস্যরা তাঁদের আটক সদস্যকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। মানববন্ধন ঘিরে ঢাকার পাঁচটি থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা প্রেসক্লাব এলাকায় অবস্থান নেন।