বিএনপি ঘোষিত ‘জাতীয় ঐক্য’ গঠনে যখন জামায়াত বাধা হিসেবে উঠে এসেছে, তখন বিএনপির পাশে থাকারই ঘোষণা দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী দলটি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার সুচিকিৎসার দাবিতে বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত প্রতীকী অনশনে এসে এই ষোষণা দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির (সহসভাপতি) মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ার।
জামায়াত নেতা বলেন, ‘অতীতের মতো আগামী দিনের সকল আন্দোলনেও জামায়াত ২০ দলীয় জোটের পাশে থাকবে।’
বাংলাদেশে বিএনপি এবং জামায়াতের সমঝোতা নতুন কিছু নয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আনুকূল্যে দলটির নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ৭০ এর দশকের শেষ দিকে। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি আর ফিরে যাননি।
এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে গোলাম আযম উচ্চ আদালতের রায়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফিরে পান। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতার দায়ে এই নাগরিকত্ব বাতিল করেছিল বঙ্গবন্ধু সরকার।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জোট না করলেও জামায়াত ও বিএনপির সমঝোতা হয়েছিল আসনভিত্তিক। আর ১৯৯৯ সালে তারা আওয়ামী লীগবিরোধী জোট করে এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতে এসসঙ্গে সরকারও গঠন করে। আর একাত্তরের খুনি বাহিনী আলবদরের দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী এবং আল আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মন্ত্রী হয়ে যান বাংলাদেশের।
নানা সময় দেশে বিদেশে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী বিএনপিকে জামায়াত ত্যাগের পরামর্শ ও দাবি জানিয়ে আসছে। এর মধ্যে সরকারবিরোধ জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপি যখন চেষ্টা চালাচ্ছে তখনও এই দাবি উঠে এসেছে।
বিএনপি যাদের সঙ্গে ঐক্য করতে চায়, সেই যুক্তফ্রন্ট নেতা এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং গণফোরাম নেতা কামাল হোসেন জানিয়েছেন, জামায়াত যে জোটে থাকবে, সেখানে তারা থাকবেন না।
বিএনপি জামায়াত ত্যাগ করবে কি না, সেটা জানায়নি। তবে জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে ছাড় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং শরিকরাও এই সিদ্ধান্তে একমত বলে জানিয়েছে দলটি।
সম্প্রতি সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন না জানিয়ে জামায়াতের আলাদা প্রার্থী দেয়া এবং বিএনপির কর্মসূচিতে দলটির অনুপস্থিতিও নানা গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে।
এর মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে জামায়াত নেতা পরওয়ার বেশ জোরাল বক্তব্য রাখেন। বলেন, ‘দেশনেত্রীর (বিএনপি চেয়ারপারসন) ওপর বর্বরোচিত অত্যাচার করা হচ্ছে। আদালত তাকে জামিন দিলেও সরকার তাকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না। আমরা জামায়াত ইসলামী বিএনপির এই অনশনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সরকারকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, দেশনেত্রীকে নিয়ে যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন তাকে ছাড়া দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ হতে দেবে না।’
অনশনে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আর বিএনপির পক্ষ থেকে এক মাসের মধ্যে নৌকা (আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক) ভাসিয়ে দেয়ার আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।