পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার, যা আগামী বছরের (২০১৯) জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এটি বর্তমান ন্যূনতম মজুরির চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি।
বৃহস্পতিবার ঢাকার তোপখানা সড়কে মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে মজুরি বোর্ডের সভার পর বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এসব তথ্য জানান।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৫৪২ টাকা। এরপর কয়েক দফা বাড়ানোর পর সর্বশেষ ২০১৩ সালে এ খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়।
কিন্তু, বাজার ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে পোশাক খাতের শ্রমিকেরা সম্প্রতি তাদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানান। বিপরীতে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এই মজুরি ৬ হাজার ৩৬০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করে।
এজন্য একটি মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। সেই বোর্ডের বৈঠক শেষ শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেসিক ৪ হাজার ১০০ টাকা; বাড়ি ভাড়া ২ হাজার ৫০ টাকা এবং অন্যান্য ১ হাজার ৮৫০।
আগামী ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে নতুন বেতন কার্যকর হবে। বাড়তি বেতন ডিসেম্বরের বেতনের সঙ্গে জানুয়ারিতে শ্রমিকেরা পাবেন বলেও জানান তিনি।
মুজিবুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালিক-শ্রমিক সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মজুরি চূড়ান্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার শ্রমবান্ধব। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের নিয়ে বেশ সহানুভূতিশীল। তিনি ক্ষমতাসীন হবার পর তিন বছরের মধ্যে দু’বার বেতন বাড়িয়েছেন। যদিও শ্রম আইনে আছে প্রতি ৫ বছর পরপর শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পুনঃনির্ধারণ করার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা মজুরি বোর্ড গঠন করেছি। এখানে সবপক্ষের প্রতিনিধি আছেন।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, এ শ্রমিক বোর্ড অনেক মিটিং, বাজার বিশ্লেষণ ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। মালিকদের পক্ষ থেকে সর্বশেষ ৭ হাজার টাকায় এসে আটকে যান। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১২ হাজার টাকা দাবি করা হয়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইস্যুটির সমাধান হয়।
তিনি বলেন, ‘ঘোষণা অনুযায়ী কোনো মালিক ৮ হাজার টাকার কমে বেতন দিতে পারবেন না। আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা আশা করব, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন এটা মেনে নিয়ে কার্যকরের উদ্যোগ নেবে।’
শ্রমিকদের উদ্দেশে মুজিবুল হক বলেন, ‘আমি গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনুরোধ করব আপনার প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। আপনারা আপনাদের শ্রম দিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবেন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখবেন। সরকারের পক্ষ থেকে সব সুবিধা দেয়া হবে।’