এক মাসের মধ্যে ‘নৌকা ভাসিয়ে দেয়ার আন্দোলন’ : বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট

ফাইল ছবি

আগামী এক মাসের মধ্যে দেশে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। বলেছেন, এই আন্দোলনে নৌকা (আওয়ামী লীগে নির্বাচনী প্রতীক) ভাসিয়ে দেয়া হবে।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বুধবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে প্রতীকী অনশনে এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।

২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর এবং ২০১৫ সালে সরকার পতন আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ বিএনপি গত তিন বছর ধরে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না। এর মধ্যে আগামী ডিসেম্বরের শেষে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আর বিএনপি ভোটে আসা বা না আসার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না দিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা নেই দলটির।

মওদুদ বলেন, ‘আর বেশি সময় নেই’ এই এক মাসের মধ্যে এমন আন্দোলনের ব্যবস্থা করতে হবে যার মাধ্যমে এই সরকারের নৌকা পানিতে ভেসে যাবে। সেই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন।’

খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়া মাধ্যমে মুক্ত করা সম্ভব না বলে মনে করেন মওদুদ। আর এ কারণে রাজপথে আন্দোলনের কথা বলেন তিনি। জানান, আর সে আন্দোলনের জন্যই আসছে নতুন কর্মসূচি।

সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এই কর্মসূচি শুরু হয়। চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। ঢাকা ছাড়া সারাদেশেও একই কর্মসূচি পালন করছে দলটি।

নির্ধারিত সময় ১০টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল নয়টার মধ্যেই কর্মসূচিস্থলে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের ভিড়ে কানায় কানায় ভরে যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকা।

মওদুদ বলেন, ‘সরকার চায় না আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পাক। তাই তারা আদালতকে ব্যবহার করে তার মুক্তি বিলম্ব করছে। যে আদালতে খালেদার বিচার হচ্ছে তা অসাংবিধানিক।’

‘তাই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার মুক্তি আর সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। তার মুক্তির একটাই পথ সেটা রাজপথ।’

প্রতীকী অনশনে বিএনপির অন্য নেতারা বলেন, বেগম জিয়াকে ছাড়া দেশে কোন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। তারা বেগম জিয়ার সু-চিকিৎসা এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য গড়ে দাবি আদায়ের ঘোষণা দেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। তাকে ছাড়া দেশে কোন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না, হতে দেয়া হবে না। ‘

‘বেগম জিয়াকে মুক্ত করেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। আর তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচনকালীন সময়ে সেনা মোতায়েন করতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে সরকার পুলিশকে ব্যবহার করছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কেউ যদি আবারও ষড়যন্ত্র করে সরকারের আঁতাতের নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জনগণ তাদেরকে প্রতিরোধ করবে এবং তাদেরকে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।’

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমেদ বিএনপি নেতাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, আহমেদ আযম খান, উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানাসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতীকী অনশন
দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীর মতো দেশের বিভিন্ন স্থানেও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।

সকাল ১০টায় খুলনার কেডিঘোষ সড়কের দলীয় কার্যালয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এতে মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনিসহ অংশ নেয় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী।

রাজশাহীতে ভুবনমেহান পার্কে সোয়া দশটার দিকে শুরু হয় প্রতীকী অনশন। এসময় বক্তারা বলেন, নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতে ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।

কর্মসূচিতে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ অংশ নেয় আরও অনেকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে