ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভোপালে লাগোয়া শিল্পাঞ্চল মান্ডিদ্বীপ এলাকায় বসবাস করেন তিনি। নাম আদেশ খামরা। বয়স ৪৮ বছর। পেশায় দর্জি।
শিল্পাঞ্চল এলাকার বাজারে তার পোশাক তৈরির দোকান রয়েছে। মানুষ তাকে একজন ভালো দর্জি হিসেবে জানলেও অন্য একটা চেহারা সামনে এসেছে কয়েক দিন আগে।
পুলিশের তথ্যমতে, দিনে দর্জির কাজ করেন আদেশ খামরা। আর রাত হলেই দর্জির পোশাক খুলে হয়ে যান ভয়ঙ্কর চেহারার মানুষ।
রাতে তার কয়েকজন সাগরেদ নিয়ে বেরিয়ে পড়ত হাইওয়েতে। দূরদূরান্তের মালবাহী ট্রাকচালকরা সেখানে বিশ্রাম নিত। আদেশ খামরা ওইসব চালক ও হেলপারদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিত। চলত মদের আসর।
ড্রাইভার আর হেলপারদের মদের সঙ্গে কৌশলে বিষ মিশিয়ে দিত আদেশ খামরার সহচররা। বিষাক্ত মদ খেয়ে ড্রাইভার-চালক মারা গেলে বা অজ্ঞান হলে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হতো। লাশ ফেলে দেয়া হতো দুর্গম কোনো এলাকায়।
ভোপালের পুলিশ ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল ধর্মেন্দ্র চৌধুরী বলেন, আজকেও নতুন করে তিনটি খুনের কথা সে স্বীকার করেছে। এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে ৩৩টি খুনের কথা জানা গেছে। প্রায় সব হত্যাকাণ্ডগুলোই কনফার্ম করা গেছে। তবে শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়- আশপাশের ৫-৬টি রাজ্যেও আদেশ আর তার সঙ্গীরা খুন করেছে। সবগুলোই খতিয়ে দেখছি আমরা।
২০১০ প্রথমে এগারো মাইল নামক একটি এলাকা থেকে দুটি ট্রাক ছিনতাই করেছিল আদেশ খামরা ও তার সঙ্গীরা। সেখান থেকে তাদের অপরাধের শুরু।
ওইদন মাদক খাইয়ে অচৈতন্য করে দিয়ে দুই চালককেই তারা হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছিল দুটি আলাদা জায়গায়। এই সিরিয়াল কিলার পুলিশের হাতে বেশ অদ্ভুতভাবেই ধরা পড়ে।
গত ১৫ আগস্ট পুলিশ একটি লাশ উদ্ধার করে। আবদুল্লাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মাখন সিংয়ের মরদেহ ছিল সেটি। পুলিশ জানতে পারে যে, ওই ট্রাকচালক মান্ডিদ্বীপ থেকে লোহা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। দেহ উদ্ধারের পরে ট্রাকটিকেও খুঁজে পাওয়া যায় হাইওয়ের ধারে।
পুলিশ সন্দেহবশত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর কয়েকজনের সন্ধান পায় পুলিশ। এরপরই নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে তাদের গ্রেফতারের পরও পুলিশ জানত না যে, এক এক করে ৩৩টি খুনের কিনারা করতে পারবে তারা। আর খোঁজ পাবে এক সিরিয়াল কিলারের।
ধর্মেন্দ্র চৌধুরী বলেন, জেরা করতে গিয়ে কখনোই মনে হয়নি অন্য সিরিয়াল কিলারদের মতো মানসিকভাবে অসুস্থ এরা। নিজেরাই এক এক করে তাদের হত্যাকাণ্ডগুলোর কথা স্বীকার করছে। এটাও জানিয়েছে যে, সম্প্রতি আদেশ নিজের একটা আলাদা গ্যাং বানিয়েছিল। আর অন্য রাজ্যে গিয়ে হত্যা আর ট্রাক চুরির ঘটনায় সেখানকার দুষ্কৃতীদেরও সাহায্য নিত।
হত্যার পরে কোনো সূত্রই রাখত না এরা। যে কারণে এত দিন পুলিশের জালে ধরা পড়েনি। একেকটি ঘটনার পরেই মোবাইল ফোন আর সিমকার্ড বদলে ফেলত আদেশ খামরা।
তাকে জেরা করে পুলিশ এখনো পর্যন্ত প্রায় ৪৫ পৃথক আইএমইআই নম্বরের মোবাইল খুঁজে পেয়েছে, যেগুলোতে ৫০টিরও বেশি সিমকার্ড ব্যবহার করেছে আদেশ খামরা।