এক যুগ আগে দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে শর্ত তুলে ধরেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সেগুলো এখনও প্রযোজ্য বলে মনে করেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন।
তিনি বলেছেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ২৩টা শর্ত দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৭ এ। সে সব শর্ত এখনও প্রযোজ্য। বিরোধী থাকলে এক রকম হবে, আর সরকারি দল হলে এটা থাকবে না, এটা হতে পারে না।’
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে একথা বলেন কামাল হোসেন, যিনি ওই সময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে ছিলেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রবীণ আইনজীবী কামাল হোসেনকে নিয়ে এই মতবিনিময় সভা আয়োজন করে। সভা পরিচালনা করেন বিএনপির নিয়ন্ত্রণে থাকা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন।
বছর শেষে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে চায় বিএনপি; সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্তও রয়েছে তাদের। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে মত গণফোরামেরও।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা নির্দলীয় সরকারের দাবি নাকচ করে বলে আসছেন, সংবিধান অনুযায়ী সরকার ও সংসদ রেখেই নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগের এক সময়ের নেতা ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নাই, এই দাবিটি আমি কোনোদিন করিনি।’
‘আজ যদি মনে করা হয়, এই সংবিধানের সংশোধনের প্রয়োজন আছে, আরও উন্নত করার দরকার আছে এবং কী কী ভাবে সংশোধন করলে আরও উন্নত হবে, কোথায় কোথায় সংশোধনী করতে হবে, বিনা দ্বিধায় সেগুলো আপনারা তুলে ধরেন।’
‘বর্তমানে সংবিধানের সংশোধনী করে তারা (আওয়ামী লীগ) যেটা করেছে, আমরা যে সংবিধান করেছিলাম, সেটাতে এই বিধান (দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন) ছিল না। ছিল যে, সংসদ ভেঙে নির্বাচন হবে। এখন যেহেতু সংশোধনী হয়েছে, এটা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে,’ বলেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে বিএনপির সভা-সমাবেশের উপর প্রশাসনের বিধি-নিষেধের সমালোচনাও করেন তিনি।
‘সভা-সমাবেশের বিষয়ে সংবিধানে যুক্তিসঙ্গতভাবে কিছু বাধা-নিষেধের কথা বলা আছে। পাইকারিভাবে, যেনতেনভাবে মিটিং করতে দিলাম না, এটা তো চ্যালেঞ্জ করা দরকার। আমরা করেছিও।’
কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ‘আশার আলো’ দেখছেন বলে জানান গণফোরাম সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘আমি ৪৬ বছরে দেখেছি, কেউ ১০ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, কেউ না। এটা আমি বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের ঐকমত্য আছে।’