সিটিসেলের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বিএনপি নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী নাসরিন খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই দিন অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকেও তলব করেছে সংস্থাটি।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী নাছরিন খান ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে দুদকে হাজির হতে বৃহস্পতিবার পৃথক নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন।
এর মধ্যে মোরশেদ খানকে নোটিস পাঠিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম। ঋণ আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ২৮ জুন ঢাকার বনানী থানায় করা মামলায় মোরশেদ খানের স্ত্রী নাসরিন খান ও সিটিসেলের এমডি মেহবুব চৌধুরীসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সিটিসেলের নামে এ বি ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয় মামলায়। মোরশেদ খান এ বি ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান ছিলেন।
বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের মূল কোম্পানির নাম প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড (পিবিটিএল)। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান কোম্পানিটির চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী নাসরিন খান একজন পরিচালক। সিটিসিলের এক-তৃতীয়াংশের মালিকানা মোরশেদ খানের প্যাসিফিক মটরস লিমিটেডের।
দেনার দায়ে ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের হাত ধরেই দেড় যুগ আগে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
১৯৯৩ সালে প্যাসিফিক মটরস যখন সিটিসেলের মালিকানায় আসে, মোরশেদ খান তখন মন্ত্রীর মর্যাদায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিনিয়োগ বিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্বে। আর এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে সিটিসেল যখন লাইসেন্স পায়, মোরশেদ খান তখন ছিলেন জাতীয় পার্টির কোষাধ্যক্ষ।
তখন দেশের একমাত্র মোবাইল ফোন অপারেটর হওয়ার সুযোগে সিটিসেল একচেটিয়া ব্যবসা করে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আরও কয়েকটি কোম্পানিকে মোবাইল ফোন সেবার লাইসেন্স দিলে সেই একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটে। এরপর থেকে ধুঁকতে থাকা সিটিসেল ২০০৪ সালে বিনিয়োগ করে সিঙ্গাপুরের সিংটেল। কিন্তু তাদের ব্যবসার আর প্রসার ঘটেনি।
পাশাপাশি আরেকটি মোরশেদ খানের মামলায় তার ছেলে ফয়সাল মোরশেদকেও ২০ সেপ্টেম্বর তলব করা হয়েছে দুদকে। ২০১৩ সালে গুলশান থানার দায়ের অর্থ পাচারের একটি মামলায় তাকে তলব করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম।
জাপার মহাসচিব হাওলাদারকে তলব :
এদিকে পৃথক আরেকটি নোটিসে সরকারি সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদ নোটিস পাঠিয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, হাওলাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি আমলা ও আদালতে উৎকোচ প্রদান এবং সরকারি সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজউকের একাধিক প্লটের মালিকও হাওলাদার হয়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ এসেছে।
সরকারের অংশীদার হওয়ার সুযোগ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হাওলাদার বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ পেয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা।