তামিম-মুশফিকের বীরত্বে ঐতিহাসিক জয়

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত ও ঐতিহাসিক এক জয় পেল বাংলাদেশ।৫০ ওভারে ২৬২ রান করার টার্গেটে মাঠে নেমে ৩৫.২ ওভারে ১২৪ রান করেই অলআউট হয়ে গেল শ্রীলঙ্কা।বাংলাদেশ জিতে গেল ১৩৭ রানে।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশের বিপর্যয়। ১ রানে নেই ২ উইকেট। এরপর আবার তামিম ইকবালও হাতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়লেন। বাংলাদেশ দল যখন এক কঠিন বিপদে, তখন অসাধ্য সাধনে এগিয়ে এলেন মিঠুন আর মুশফিকুর রহীম। তৃতীয় উইকেটে ১৩১ রানের বড় জুটি গড়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করেন এই যুগল। তাদের জুটির উপর ভর করেই বড় সংগ্রহ গড়ার স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা।মোহাম্মদ মিথুনের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৬৩। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি তার প্রথম অর্ধশত।

জয় পরাজয় তুচ্ছ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠার মতো ব্যাপার! যাকে মিনিটখানেক আগেও দেখা গেল ভাঙা হাতে ব্যান্ডেজে, গলার সঙ্গে হাতটা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার; সেই তামিম ইকবাল একটু পর হাজির বাইশ গজে। যে ওপেনারের হয়ত এশিয়া কাপের বাকি ম্যাচগুলো খেলা হবে না। সেই তিনিই মাঠে নামলেন, দলের প্রয়োজনে!বলছি তামিমের কথা।

যাকে দ্বিতীয়বার মাঠে দেখে দর্শকদেরও কষ্ট লাগছিল। খেলার প্রতি এত আবেগ, দেশের জন্য এত প্রেম! এক হাতেই ব্যাটিং করতে নেমে গেলেন তামিম? মুশফিকের অবিশ্বাস্য ইনিংসটা ছাপিয়ে যেন সব আলো বাঁ-হাতি এই ওপেনারের উপর। তিনি কি করে পারলেন, এমন কঠিন আর সাহসী একটি সিদ্ধান্ত নিতে?

তামিমের এই সাহসিকতায় শেষ উইকেটে আরও ৩২টি রান যোগ করল বাংলাদেশ। মাত্র ১৬ বলে। পুরো রানটাই যদিও এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। কিন্তু তামিম যদি ওমন সাহসিকতার পরিচয় না দিতেন, মুশফিক তো এই সুযোগটাই পেতেন না!

ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিমের এটি ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। আর ওয়ানডেতে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। এই রান করার পথে তিনি ১১টি চার মারেন ও চারটি ছক্কা হাঁকান। ওয়ানডেতে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিকুর রহিমের এই ইনিংসটি দ্বিতীয় সেরা। ১৫৪ রান করে সবার উপরে আছেন তামিম ইকবাল।

শেষপর্যন্ত মুশফিকুর রহীম তামিমকে সঙ্গে নিয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করলেন, খেললেন ক্যারিয়ারসেরা ১৪৪ রানের ইনিংস। ১৫০ বলের যে ইনিংসটি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান সাজিয়েছিলেন ১১ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায়! এর চেয়ে বড় ইনিংস হয়তো অনেকেই খেলেছেন বিশ্বক্রিকেটে। তবে একটা প্রান্ত আগলে রেখে এভাবে এগিয়ে চলা; অবিশ্বাস্য, আসলেই অবিশ্বাস্য! তার এমন বীরত্বপূর্ণ ইনিংসে ভর করে শেষপর্যন্ত ৩ বল বাকি থাকতে ২৬১ রানে অলআউট হয় টাইগাররা ।

সত্যি বলতে কি-তার চেয়েও যেন অবিশ্বাস্য ছিল তামিমের মাঠে নেমে পড়া। তামিম যদি নামতে না পারতেন, বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যেত ২২৯ রানেই। কিন্তু সর্বশেষ স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের রান ওঠে ২৬১।

তারপর শ্রীলঙ্কার ইনিংসের শুরুতেই জোড়া আঘাত হানলেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে উপুল থারাঙ্গাকে বোল্ড করার পর পঞ্চম ওভারে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেছেন তিনি। এর আগে দ্বিতীয় ওভারে কুসল মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজুর রহমান।

টাইগারদের পক্ষে মাশরাফি, মিরাজ ও মোস্তাফিজ ২টি করে এবং রুবেল, সাকিব ও মোসাদ্দেক ১টি করে উইকেট লাভ করেন। লঙ্কানদের পক্ষে সবচেয়ে সফল ছিলেন মালিঙ্গা। দীর্ঘ এক বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা এই পেসার ২৩ রানে নেন ৪টি উইকেট।এমডিকে পেরেরো শ্রীলঙ্কা দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন ৪৪ বলে।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে