জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের পর শুক্রবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে শনিবার স্থানীয় সময় (যুক্তরাজ্য) সকাল পৌনে ৮টায় লন্ডনে পৌঁছান তিনি।
লন্ডনে পৌঁছে ফখরুল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
লন্ডন থেকে আজ দেশে ফেরার কথা বিএনপি মহাসচিবের। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের সাংগঠনিক অবস্থার পাশাপাশি জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিরোস্লাভ জেনকার এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের বৈঠকের বিষয়টিও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করবেন বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেস্কের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। ওই বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করেন ফখরুল। এতে অন্তত ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকও ছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বিএনপি নেতারা নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়ে ব্রিফ করেন। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির মতামত জানতে চান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। বিএনপি তাদের মতামত দেন।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে সেখানকার রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যই তাদের বক্তব্য।
বৈঠকে উপস্থিত দলের এক নেতা জানিয়েছেন, খুব ভালো বৈঠক হয়েছে। আগামী মাসে বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর আবারও ফলোআপ বৈঠক করতে পারে। বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলা, সাজা ভোগ এবং জামিনের বিষয়ে কথা বলেন।
এ সময় তারা অভিযোগ করেন, মিথ্যা অভিযোগে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এজন্য বিএনপি নেতারা মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তি।
থিঙ্কট্যাঙ্কদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন, কোটা পদ্ধতি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় থিঙ্কট্যাঙ্করা জানতে চান, ক্ষমতায় এলে তারা কী ধরনের পরিবর্তন আনবেন। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতারা ভিশন-২০৩০ এর আলোকে কথা বলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে সংস্থাটির রাজনীতিবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি। ওইদিন বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা থেকে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য জাতিসংঘের সহায়তা চান তারা।
এ সময় তারা বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে সরকারের নানা তৎপরতার বিষয়ে জাতিসংঘকে অবহিত করেন। এছাড়া দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি, তার অসুস্থতা, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সার্বিক বিষয় বৈঠকে তুলে ধরেন।
দেশের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের পদক্ষেপ আশা করেন বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতারা। এ সময় বাংলাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়নের কিছু ডকুমেন্টও হস্তান্তর করেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং জাতিসংঘের চারজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে বুধবার নিউইয়র্ক যান বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর।