একাদশ জাতীয় নির্বাচন ও সম্ভাব্য আন্দোলনকে সামনে রেখে সুখবর পেতে যাচ্ছেন বিএনপির মূল স্রোতের বাইরে থাকা নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের সব পর্যায়ের নেতাদের দলে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। তবে সবাইকে দলে ফেরানো হবে কি না তা এখনো চূড়ান্ত নয়।
ইতিমধ্যে এসব নেতার খসড়া তালিকা তৈরি করছেন দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারেক রহমানের নির্দেশেই এই কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
এই প্রক্রিয়া শেষে নানা কারণে দলের নিষ্ক্রিয় ও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বের চেষ্টা কাজ করা সংস্কারবাদী বলে পরিচিত নেতাদের সক্রিয় করে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়া হতে পারে।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। তবে তার আগে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে আবার মাঠে নামার পরিকল্পনাও আছে। টানা দুইবার রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির জন্য আগামী কয়েকটি মাস হতে পারে বাঁচা-মরার লড়াই। আর এই ‘যুদ্ধে’ নামার আচে নিজেদের শক্তি ক্ষয় যতটা হয়েছে তা পূরণ করতে চায় দলটি। এ জন্যই অভিমানী ও দূরে থাকা নেতাদেরও আবার ফেরানোর এই উদ্যোগ।
একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বহিষ্কৃতদের মধ্যে যাদের বড় ধরনের কোনো ‘অপরাধ’ নেই, দলের নেতৃত্বকে বিশ্বাস করেন এবং অন্য কোনো দলেও যাননি, তাদের বিএনপিতে ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হতে পারে।’
গত ১০ বছরে কেন্দ্র থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির চার শতাধিক নেতা বহিষ্কৃত হয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের নামের তালিকা লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের নামসহ বিস্তারিত তথ্য শিগগির পাঠানো হবে।
এই নেতাদের কেন এবং কাদের নির্দেশে বহিষ্কার করা হয়েছে সে সব বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে তালিকায়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দলের অনেক নেতা তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে আবেদন করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে।’
এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকার পাশ্ববর্তী একটি জেলার বহিষ্কৃত নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও আমরা দলের সঙ্গেই আছি। তারপরও আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হলে সেটা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার মতো বিষয়।’
তবে এমন উদ্যোগের কথা আগে শোনা গেলেও তা কার্যকর হয়নি বলে জানান এই নেতা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ বিষয়ে বলেন, ‘একই নীতি আদর্শের পুরনো বন্ধুদের একই ধারায় নিয়ে এসে প্রতিযোগিতা করলে এতে দোষের কিছু নয়।’
কপাল খুলতে পারে যাদের :
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে যাদের নাম তালিকায় উঠেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন পাবনা জেলার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান মিন্টু, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাবেক নেতা হযরত আলী, নাটোর জেলার সাবেক সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ডিউক, নাটোর জেলার সাবেক নেতা শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, আব্দুল মান্নান, খন্দকার জোবায়ের, ভোলা জেলার সাবেক সদস্য আক্তারুজ্জামান টিটু, বরগুনার তালতলী উপজেলার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম মামুন, টাঙ্গাইল জেলার সাবেক উপদেষ্টা আব্দুল রশিদ চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া জেলার সাবেক সদস্য আলতাব হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলার সাবেক সহ-সভাপতি মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সাবেক সভাপতি রফিকুর রহমান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সাবেক সহসভাপতি আজগর আলী এবং চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক এম এ হান্নান।