পদ্মা তীরবর্তী শরীয়তপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে নদী ভাঙন। এতে সর্বশান্ত হয়ে ঠিকানাহীন হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। অব্যাহত ভাঙনে শরীয়তপুরের মানচিত্র ছোট হয়ে এলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি আজও।
গত দেড় বছরে পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে ৫ হাজার ৮১টি পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৮ হাজার পরিবার। এখনও অব্যাহত রয়েছে পদ্মার ভাঙন। এ ভাঙনে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর, মোক্তারের চর ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
এদিকে চলতি বছরের জুন মাস থেকে নড়িয়া এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। সম্প্রতি ভাঙনের তীব্রতা ও ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। প্রমত্তা পদ্মার স্রোতে মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও কোনো কাজে আসছে না।
শরীয়তপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় এবং বেসরকারি এনজিও এসডিএস সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই শরীয়তপুরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে পদ্মা। তবে দুই বছর যাবৎ এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি। ভাঙনে বিশাল বিশাল স্থাপনা মুহূর্তেই যেন গিলে খাচ্ছে সর্বনাশা পদ্মা। নিঃস্ব মানুষের আহাজারিতে এখন ভারি হয়ে উঠেছে পদ্মার পাড়।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৮১টি পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৮ হাজার পরিবার। তবে স্থানীয়রা বলছেন ৬ হাজারেরও বেশি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তা (অ: দা:) মো. মাহমুদ আল হাসান ও এসডিএসের মানব সম্পদ বিভাগের উপ-পরিচালক অমলা দাস গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮১টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (যাদের ভেতর ৫৫ ভাগ দরিদ্র)। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার একর জমি ও ২৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
আর মূলফৎগঞ্জ বাজারসহ ঝুঁকিতে রয়েছে ১ হাজার ৩০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুইটি প্রাইভেট ক্লিনিক নদী গর্ভে চলে গেছে। আর একটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ২৫০ সয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতালের অর্ধেক নদী গর্ভে চলে গেছে।
ইতোমধ্যে তিন হাজার ৫১৪টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৩০ কেজি করে মোট ১০৫ দশমিক ৪২০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার এবং ৩৫০টি পরিবারের মাঝে ৭০০ বান্ডিল টিন বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নিহত ও নিখোঁজ ১৪ জনের পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
নড়িয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল লতিফ বেপারী জানান, ৪নং ওয়ার্ডে এক হাজার ২০০ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বা ভাড়া বাসায় উঠেছেন। ভাঙনের কবলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব মানুষ।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, পদ্মা নদীর পানি না কমা পর্যন্ত তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব না। এ মুহূর্তে ভাঙন রোধ সম্ভব না হলেও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তীব্রতা কমানোর চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের জানান, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের জন্য শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার প্রায় ৯ কিলোমিটার জুড়ে পদ্মার ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গত ২ জানুয়ারি একনেক সভায় পাস হয়। পদ্মা সেতু থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা।
২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বর্তমানে পদ্মার ভাঙনের তীব্রতা রোধে জুলাই মাসে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ অর্থ ব্যবহার করে ১১ জুলাই থেকে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়ে অব্যাহত আছে। এই খাতে নতুন করে আরও ২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।