সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধেউঠা ১১টি অভিযোগের অনুসন্ধানের বিষয়ে এক বছরেকার্যত কোনোই অগ্রগতি নেই। অবশ্য সিনহাকে টাকাদেয়ার বিষয়ে দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতিদমন কমিশন– দুদক। কিন্তু এরপর কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নিসংস্থাটি।
গত ৬ মে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিকলেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই ব্যবসায়ী মোহাম্মদশাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।পরে জানা যায়, এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন সিনহা।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন তাদেরকেজিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফারমার্সব্যাংকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ৪ কোটি টাকা ঋণনিয়েছেন তারা। পরে ওই টাকা ‘রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণব্যক্তির’ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে।
দুই ব্যবসায়ী দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হয়ে জানান, ২০১৬ সালের শুরু দিকে এস কে সিনহার উত্তরার ৬নম্বর সেক্টরের ছয়তলা বাড়িটি টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শ্রান্তিরায় ছয় কোটি টাকায় কেনার জন্য বায়না করেন। বাড়িটিবায়না করার পর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের৫৫ লাখ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণের সময় নেওয়া আরো ১কোটি ৪০ লাখসহ মোট ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধকরা হয়। এ কারণে বাড়ির মূল্যের বাকি চার কোটি টাকাএসকে সিনহার কাছে পরিশোধ করা হয়।
বাড়িটি কেনেন সিনহার পিএস রঞ্জিতের স্ত্রী শ্রান্তি রায়।আর রঞ্জিন ও শান্তিকে সহযোগিতা করতে এই টাকাদিয়েছেন শাহজাহান ও নিরঞ্জন।
সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান বিষয়ে দদুদকেরজনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভূট্টাচার্য গণমাধ্যমকেবলেন, ‘অনেক আগের বিষয়। এই মুহূর্তে কিছু বলতেপারছি না।’
সম্প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহারএকটি বই বাজারে আসলে এ নিয়ে আবারও আলোচনাশুরু হয়। ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যানরাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামেআত্মজীবনীমূলক এই বইয়ে বাংলাদেশের সাবেক এইপ্রধান বিচারপতি। এতে তিনি দাবি করেছেন, সরকারেরহুমকির মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন।
আর এই বইটি আসার পর সিনহার বিরুদ্ধে উঠা ১১টিঅভিযোগের বিষয়টিও আবার আলোচনায় এসেছে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়েরপর বিতর্কের মুখে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর এক মাসেরছুটি নিয়ে বিদেশ যান সিনহা। বলে যান, তিনি দেশেফিরবেনই। তবে ১১ নভেম্বর সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমেপদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তিনি।
সিনহা দেশ ছাড়ার পরদিন সুপ্রিমকোর্ট থেকে একবিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, আর্থিকঅনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগওঠার কথা জানানো হয়।
বলা হয়, এসব অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগেরঅন্য বিচারকরা আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসেমামলা নিষ্পত্তিতে রাজি নন।
ওই বছরের ১৩ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিতসংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতিরঅভিযোগের তদন্ত করা হবে।
সিনহার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল, তার মধ্যে একটিছিল তার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা জমা হওয়া।টাকাটা জমা করেছিলেন দুই ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ওনিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।