সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রকাশিত বইয়ের বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য, ড. কামাল-বি. চৌধুরীদের সাথে দেশে বৃহত্তরঐক্যের অংশীদার হওয়ার চেষ্টা, জাতিসংঘের রাজনৈতিকবিভাগের সহকারী মহাসচিব ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরেরসঙ্গে বৈঠক–বিএনপির এসব তৎপরতার দিকে সরকারিদল আওয়ামী লীগ তীক্ষ্ণ নজর রাখছে ।
সরকারি দলের একাধিক নেতা বলছেন, জাতিসংঘ ওযুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক কিংবা এস কে সিনহার পক্ষে দেয়া বিএনপির বক্তব্য ও মন্তব্য নিয়ে এখনো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
তবে যুক্তফ্রন্ট, গণফোরামসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরসঙ্গে বিএনপির ঐক্য গড়ে উঠলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেসরকারবিরোধীদের তৎপরতা আরও বাড়বে বলে মনেকরছেন তাদের অনেকে। বলা যায়, এই বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তিত আওয়ামী লীগ।
কারণ, ভোটের মাঠে ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজাচৌধুরী, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহঅন্য নেতারা বড় মাপের কোনো নিয়ামক না হলেওআন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাঁদের একটা পরিচিতি আছে।
এমন বাস্তবতায় বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়ে কোনো জোট হলে এবং বিএনপি এতে যুক্ত হলে আন্তর্জাতিকপরিমণ্ডলে এমন একটা বার্তা যাবে যে সরকারবিরোধী সবাই এককাট্টা।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে ১৪ দল গঠন করে এবং ২০০৬সালে মহাজোট গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগও এই কৌশল নিয়েছিল।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রের দাবি, বিএনপিরনিযুক্ত লবিস্টের তৎপরতায় জাতিসংঘের সহকারীমহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে বিএনপির নেতাদেরবৈঠকের প্রভাব কতটুকু, আপাতত সেদিকে নজর রাখছেআওয়ামী লীগ।
গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘেরসাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ছেড়েছেন।জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোনো জানার বিষয় বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আগ্রহের জায়গা থাকলে, তা এই সফরে প্রধানমন্ত্রী অবহিত হতে পারবেন এবং সেই প্রেক্ষিতে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র মতে, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সরকার বিরোধী বিভিন্ন শক্তি জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যে নানাতৎপরতা চালাবে– এটা তাদের বিবেচনায় আছে।জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সাম্প্রতিক বৈঠকটি এরই অংশ।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেওজাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজতারানকো ঢাকায় এসে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টাকরেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি এবারও একাদশজাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রভাবশালী কোনো দেশের বিশেষ দূত আনার বিষয়ে চেষ্টা করতেই পারে।
এক্ষেত্রে অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মন্তব্য হচ্ছে, চাপে ফেলে বিএনপি বা অন্য কোনো দলই আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিশেষ কিছু আদায় করতে পারবে না। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে দেশে যে পরিস্থিতি ছিল, এখন তার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছেআওয়ামী লীগ।
আন্তর্জাতিক বিষয়াদি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৪ সালে মূল বিষয় ছিল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে কি না। এবার এই প্রশ্ন অতটা জোরালো নয়।আর আওয়ামী লীগ চাইছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রভাবমুক্ত হয়ে নির্বাচনে আসুক বিএনপি। এমনটা হলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনার সুযোগ হতে পারে।
সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি) লবিস্ট নিয়োগ করেযুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে লবিং করবে আমাদের চাপ দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য।আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের গণভিত এবং আমাদের শিকড় দুর্বল নয়। আমাদের শিকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। আওয়ামী লীগকে চাপ দিতে পারে কেবল বাংলাদেশের জনগণ। অন্যকারও চাপে আওয়ামী লীগ নত হবে না।’
প্রসঙ্গত, বিএনপিও দীর্ঘদিন ধরেই বর্তমান সরকারেরবিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।তারও আগে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। এই উদ্যোগকে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট।
এরই মধ্যে গণফোরামের সঙ্গে মতৈক্য হয়েছে সাবেকরাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিতজোট যুক্তফ্রন্ট। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনেরেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যেএই ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপিরও যোগাযোগ চলছে।
এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, আজকের সমাবেশে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একা, নাকি প্রতিনিধিদল নিয়ে সমাবেশে যাবেন; তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, আজ ২২সেপ্টেম্বর শনিবারের সমাবেশে বিএনপিরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে। যদি তেমন কিছু হয় তাহলে আওয়ামী লীগও নতুন করে ভাবতে শুরু করবে।