দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও অধিনায়ক রোহিত শর্মার জোড়া সেঞ্চুরিতে এশিয়া কাপে সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করলো ভারত। ধাওয়ানের ১১৪ ও রোহিতের ১১১ রানের সুবাদে পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এই জয়ের ফলে এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলার পথ অনেকাংশেই পরিস্কার হলো ভারতের। কারন সুপার ফোরে টানা দু’ম্যাচ জিতলো রোহিত শর্মার দল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত ম্যাচে ব্যাটিং-এ নেমে ২৪ রানের সূচনা পায় পাকিস্তান। ওপেনার ইমাম উল হককে ১০ রানে থামিয়ে দিয়ে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ভারতের লেগ-স্পিনার যুজবেন্দ্রা চাহাল। আরেক ওপেনার ফখর জামানও এ ম্যাচে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। ৩১ রানে তাকে তাকে লেগ বিফোর ফাঁেদ ফেলেন ভারতের আরেক স্পিনার বাঁ-হাতি কুলদীপ যাদব।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি বাবর আজম। ৯ রানে আউটের শিকার হন তিনি। এরপর পাকিস্তানের মিডল-অর্ডারে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ও শোয়েব মালিক দলের রানের চাকা সচল করেন। তৃতীয় উইকেটে ভারতীয় বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করে খেলতে থাকেন তারা। এতে পাকিস্তানের স্কোর দেড়শ ছাড়িয়ে যায়। দু’জনে জুটিতে ১০৭ রান যোগ করার পর বিচ্ছিন্ন হন তারা। ৪৪ রান করা সরফরাজকে তুলে নিয়ে ভারতকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন ভারতের কুলদীপ।
সরফরাজ হাফ-সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে ফিরে গেলেও, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৩তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মালিক। দলীয় ২০৩ রানে বিদায় নেন মালিক। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯০ বলে ৭৮ রান করে জসপ্রিত বুমরাহর শিকার হন তিনি। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মালিকের বিদায়ের পর পরের দিকে ব্যাটসম্যানরা পাকিস্তানকে বড় স্কোর এনে দিতে পারেননি। টেল এন্ডার আসিফ আলীর ২১ বলে ৩০ রানের সুবাদে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩৭ রানের সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। ভারতের বুমরাহ, চাহাল ও কুলদীপ ২টি করে উইকেট নেন।
২৩৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে শুরুটা দেখেশুনেই করেন ভারতের দুই ওপেনার ধাওয়ান ও রোহিত। ৫ ওভারে ২৩ রান যোগ করেন তারা। ষষ্ঠ ওভারে পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদির চতুর্থ ডেলিভারিতে কভারে ক্যাচ দিয়েছিলেন রোহিত। সেটি তালুবন্দি করতে পারেননি ইমাম।
জীবন পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন রোহিত। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ধাওয়ান। তাই প্রথম ১০ ওভারে ভারতের রান গিয়ে দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫৩। ভারতকে শতরানে পৌঁছে দিতে মোট ১১৫ বল মোকাবেলা করেন ধাওয়ান ও রোহিত। এরমধ্যে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছিলেন ধাওয়ান। হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে দেরি করেননি রোহিতও। ধাওয়ান ৫৬তম বলে হাফ-সেঞ্চুরি পেলেও, রোহিত পেয়েছেন ৬৪তম বলে।
হাফ-সেঞ্চুরির পর মারমুখী হয়ে উঠেন দুই ওপেনার। ফলে ২৬তম ওভারেই দেড়শ ও ৩৩তম ওভারে ২শ রানের কোটা স্পর্শ করে ভারত। আর ৩৩তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম ও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান ধাওয়ান।
সেঞ্চুরি পাবার পরের ওভারেই রান আউটের ফাঁেদ পড়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ধাওয়ান। ১৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১৪ রান করেন তিনি। রোহিতের সাথে ২০১ বলে ২১০ রানের জুটি গড়েন ধাওয়ান । পাকিস্তানের বিপক্ষে উদ্বোধণী জুটিতে ভারতের এটিই সর্বোচ্চ রান। আগেরটি ছিলো ১৫৯ রানের। ১৯৯৮ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সিলভার জুবলি ইনডিপেন্ডন্স কাপের ফাইনাল ম্যাচে উদ্বোধণী জুটিতে ১৫৯ রান করেন শচীন টেন্ডুলকার ও সৌরভ গাঙ্গুলী। এছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোন উইকেট জুটিতে ধাওয়ান-রোহিতের ২১০ রান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ধাওয়ান ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরির দেখা পান রোহিতও। ১০৬তম বলে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি। এই সেঞ্চুরির পথে ভারতের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭’হাজার রান পূর্ণ করেন রোহিত। শেষ পর্যন্ত দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১১৯ বলে অপরাজিত ১১১ রান করেন রোহিত। তার সঙ্গী আম্বাতি রাইদুর সংগ্রহ ছিলো ১২ রান। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের ধাওয়ান।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরে শেষ ম্যাচ খেলবে ভারত।
স্কোর কার্ড :
পাকিস্তান ইনিংস :
ইমাম এলবিডব্ল্ ুব চাহাল ১০
ফখর এলবিডব্ল্ ুব কুলদীপ ৩১
বাবর রান আউট ৯
সরফরাজ ক শর্মা ব কুলদীপ ৪৪
মালিক ক ধোনি ব বুমরাহ ৭৮
আসিফ বোল্ড ব চাহাল ৩০
শাদাব বোল্ড ব বুমরাহ ১০
নওয়াজ অপরাজিত ১৫
হাসান অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (লে বা-৫, ও-৩) ৮
মোট : (৭ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৩৭
উইকেট পতন : ১/২৪ (ইমাম), ২/৫৫ (জামান), ৩/৫৮ (বাবর), ৪/১৬৫ (সরফরাজ), ৫/২০৩ (মালিক), ৬/২১১ (আসিফ), ৭/২৩৪ (শাদাব)।
ভারত বোলিং :
ভুবেনশ্বর : ৯-০-৪৬-০ (ও-২),
বুমরাহ : ১০-১-২৯-২,
চাহাল : ৯-০-৪৬-২,
কুলদীপ : ১০-০-৪১-২ (ও-২),
জাদেজা : ৯-০-৫০-০,
কেদার : ৩-০-২০-০।
ভারত ব্যাটিং :
রোহিত অপরাজিত ১১১
ধাওয়ান রান আউট (হাসান/মালিক) ১১৪
রাইদু অপরাজিত ১২
অতিরিক্ত (ও-১) ১
মোট (১ উইকেট, ৩৯.৩ ওভার) ২৩৮
উইকেট পতন : ১/২১০ (ধাওয়ান)।
পাকিস্তান বোলিং :
আমির : ৫-০-৪১-০,
শাহিন : ৬-০-৪২-০,
হাসান : ৯-০-৫২-০,
নওয়াজ : ৭-০-৩৫-০ (ও-১),
শাদাব : ৮-০-৫৪-০,
মালিক : ৪.৩-০-১৪-০।
ফল : ভারত ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : শিখর ধাওয়ান (ভারত)।