জাতীয় ঐক্য : বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার শর্ত

বিশেষ প্রতিনিধি

যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্য গড়ার শর্ত হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।

জাতীয় ঐক্য গড়তে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন এবং বুদ্ধিজীবী জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়ার পর আজ মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বারিধারায় বি চৌধুরীর বাড়িতে তার সঙ্গে বৈঠক করতে যান বিএনপির কয়েকজন নেতা। এ সময় তাদেরকে এই শর্ত দেয়া হয়।

universel cardiac hospital

বিএনপির পক্ষে এই বৈঠকে ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সঙ্গে ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বৈঠকে যুক্তফ্রন্টের শরিক জেএসডির আ স ম আবদুর রব এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাও উপস্থিত ছিলেন। কামাল হোসেনের গণফোরামের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন।

বৈঠকের পর বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐক্য চাই, তবে এই ঐক্যে আসতে হলে বিএনপিকে অবশ্যই জামায়াতকে ছেড়ে আসতে হবে।

এই দাবির কারণ জানতে চাইলে মাহী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী দল বা ব্যক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনো ঐক্য হতে পারে না।

তবে বিএনপির প্রতিনিধি টুকু এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে কিছু বলেননি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণফোরাম এবং তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সক্রিয় হওয়া যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য করতে মরিয়া বিএনপি। এতে কারা জাতীয় ঐক্য বলছে।

অন্যদিকে কামাল হোসেন ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নামে আরও একটি ‍উদ্যোগ নিয়ে আগাচ্ছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর এই সমাবেশে যোগ দেয় বিএনপিও। সেই সমাবেশে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণাও এসেছে। এর আগে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা এসেছে।

বিএনপিকে এই শর্ত এর আগেও দিয়েছে বিকল্প ধারা। তবে বিএনপি এ বিষয়ে কোনো অবস্থানই জানাচ্ছে না।

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াত, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক দল ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে জোট করে বিএনপি। পরে এরশাদ জোট ছেড়ে দিলে তার দলের একাংশ বিজেপি নামে জোটে থেকে যায়।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ভোট যোগ হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি অভাবনীয় জয় পায়। তবে ২০০৮ সালে তারা ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করে।

২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় নজিরবিহীন সহিংসতার জন্যও জামায়াতকে দায়ী করা হয়। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সময় এলে জামায়াত ছাড়বেন তারা। তবে সে সময় আর আসেনি।

বাংলাদেশে জামায়াতের চার থেকে পাঁচ শতাংশ ভোট রয়েছে, যেটি বিএনপির ভোটের সঙ্গে যোগ হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াই করা সহজ হয়। তবে গণফোরাম কখনও কোনো আসনে জামানত রক্ষা করার মতো ভোট পায়নি। অন্যদিকে যুক্তফ্রন্টের তিন শরিক বিকল্প ধারার মুন্সীগঞ্জের একটি আসনে কিছু ভোট থাকলেও দেশের অন্য কোথাও তাদের শক্তি আছে, সেই প্রমাণ নেই।

জেএসডির আ স ম আবদুর রব এক সময় লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসলেও এখন আর সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থানে নেই। দেশের অন্য কোথাও তার দলের প্রভাব নেই। আর নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে দুই বার বগুড়া-২ আসনে বলার মতো ভোট পান। অন্য দলের হয়ে লড়াইয়ে নেমে তিনি জামানত হারান এর আগে।

ফলে বিএনপিকে ভোটের লড়াইয়ের কথা চিন্তা করে জামায়াত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তাই তারা এ বিষয়ে তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে