জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নানকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৫১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে যা সুদসহ ৯২৯ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
গতকাল সোমবার দুদকের কার্যালয় থেকে দুদকের উপপরিচালক এস এম সাহিদুর রহমানের সই করা তলবি নোটিশে তাকে আগামি ২৭ সেপ্টেম্বর হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
দুদক উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদক ২০১৬ সাল থেকে এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে বলে প্রনব কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে (এফআইডি) প্রতিষ্ঠানটির এ বিষয়টি তুলে ধরে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট বকেয়া ঋণ প্রায় ৮৫৭ কোটি টাকা। এর ৯৩ শতাংশ অর্থাৎ ৭৯৭ কোটি টাকা খেলাপি। এর মধ্যে ৫১৮ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের।
২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিআইএফসিতে বিভিন্ন মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুল মান্নান দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ পরিচালক পদে ছিলেন তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান। এ ছাড়া তার দুই মেয়ে ও কয়েকজন নিকটাত্মীয় ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে আবদুল মান্নান সানম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিআইএফসি থেকে নামে-বেনামে আবদুল মান্নান এবং তার পরিবারের সদস্য পরিচালক ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ঋণের আড়ালে ৫১৮ কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। যা সুদ-আসলে বর্তমানে ৯২৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ অনিয়মের দায়ভার ওই সময় স্বীকার করে চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী নিয়মবহির্ভূতভাবে উত্তোলিত অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি ব্যাংলাদেশ ব্যাংককে দেন। ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ কিস্তিতে প্রায় ১২০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। বাকি অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি (বিআইএফসি) থেকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও প্রতিশ্রুতির অর্থ ফেরত না দিয়ে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান।
জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক বিদেশি তিনটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে- ফাইভ কনটিনেন্টস ক্রেডিট লি., টিস মার্ট ইন্টারন্যাশনাল লি. ও মেরিল অ্যান্ড ফরবেস ইন্টারন্যাশনাল লি.। তিন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় আছে। এদের তথ্য চেয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক পায়নি। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পাইওনিয়ার ড্রেসেস ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ, সুকুজা ভেঞ্চার ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীর ১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানা শেয়ার ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণের নামে এ প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে বিধিবহির্ভূতভাবে টাকা উত্তোলন করায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ২৬(১) ধারায় তিন পরিচালককে অপসারণ করা হয়।
এ ছাড়া পাইওনিয়ার ড্রেসেসের প্রতিনিধি উম্মে কুলসুম মান্নান, তানজিলা মান্নান ও খালেদ আমিরুল করিম ঋণখেলাপির দায়ে প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ থেকে অপসারিত হয়েছেন। এ ছাড়া আব্বাস উদ্দিন আহমেদ এবং আরশাদ উল্লাহ পদত্যাগ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে বিআইএফসিকে চিঠিও দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যার অনুলিপি দুদককেও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কো. (বিআইএফসি) ১৯৯৬ সালের ১০ আগস্ট যাত্রা শুরু করে। কোম্পানি আইন-১৯৯৪-এর আওতায় এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা হয়। এর অনুমোদিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি।