রাজধানীতে ডেঙ্গু আতঙ্ক : প্রতিদিন আক্রান্ত ৯২ জন!

বিশেষ প্রতিনিধি

রাজধানীতে বিরাজ করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে প্রতিদিন ৯২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মাসের শুরুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকলেও এখন আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। মেঘ বৃষ্টিও কম। কিন্তু চিকিৎসকদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।

universel cardiac hospital

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইর্মাজেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৪১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নাসিমপুর গ্রামের আর্জিনা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূ ডেঙ্গু শকড সিন্ড্রোমে মারা যান।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সোমবার) ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ জন। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২২৬ জন ডেঙ্গু রোগী।

ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে ৩৭ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৬৩ জন, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ১৬ জন, বারডেম হাসপাতালে ১৯ জন ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে ৯২ জন ভর্তি রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইর্মাজেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গু মওসুম বলা হয়। সে হিসেবে আগামী মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকবে বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ১৩৯ জন আক্রান্ত হন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৬ জন, ৭ জন, ৫ জন, ১৪ জন ও ৩৫ জনসহ মোট মাত্র ৮৭ জন। এসময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

জুন থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যথাক্রমে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৭৬ জন, ৮৮৭ জন, ১ হাজার ৬৬১ জন ও ২ হাজার ৪১ জন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন যথাক্রমে ৩ জন, ৪ জন, ৬ জন ও একজন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু হেমোরেজিক এবং তা থেকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এ কারণে সাধারণ জ্বরকেও অবহেলার সুযোগ নেই।

জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগই আগে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তার ডেঙ্গু হেমোরেজিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে তিনি জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে। সম্প্রতি থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়েছে। এগুলো দ্রুত ধ্বংসের উদ্যোগ নিতে হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে