জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতির ঝুঁকিতে বাংলাদেশের ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ : বিশ্বব্যাংক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত প্রভাবে বাংলাদেশের ১৩কোটি ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত জলবায়ু বিষয়ক এক প্রতিবেদনে তথ্য জানানো হয়।

তাপমাত্রা বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। গতকাল প্রতিবেদনটি প্রকাশকরা হয়।

universel cardiac hospital

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের কৃষি, স্বাস্থ্য ৎপাদনশীলতা ক্ষতির মুখে পড়ছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জেলাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশকে দশমিক শতাংশ জিডিপি (মোট দেশজ উত্পাদন) হারাতে হতে পারে।

উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সময় ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউয়িগ শেফার, বাংলাদেশে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি থেকেআড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে আলোচ্য সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হবে চট্টগ্রাম বিভাগের এলাকাগুলো। ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা ১০টি জেলার মধ্যে সাতটিই চট্টগ্রাম বিভাগের। এরমধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণএলাকা কক্সবাজার। ঝুঁকির তালিকায় থাকা অন্যান্য এলাকাগুলো হলো বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, বরগুনা, বাগেরহাট সাতক্ষীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান অন্তত ১৮ শতাংশ কমে যেতেপারে। ফলে তা বাংলাদেশের দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

হার্টউয়িগ শেফার বলেন, বিশ্বব্যাপী বিশেষত বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তন একটি মারাত্মক হুমকি তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ।এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

অবশ্য বিশ্বব্যাংকের এমন সতর্কবার্তার মধ্যেও বাংলাদেশ  পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সব ধরনের সূচকেই বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতির প্রমাণ রেখেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।তবে অতীতের মত সস্তায় বিদেশি ঋণ আসছে না। তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন সংস্থাগুলো এগিয়ে আসতে পারে। সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদন প্রস্তুতকারক মুথুকুমারা মানি।

এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান চলাকালে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অর্থমন্ত্রী বৈঠক করেন।বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, চলতি অর্থবছরের সরকারের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের রেসপন্স খুবই ভালো। সম্প্রতি সরকার প্রবর্তিত শত বছরের ডেল্টা প্ল্যানে সংস্থাটি সহযোগিতা করবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রভাবের চিত্র উঠে আসে। আলোচনায়  অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন মানুষের ভোগ ব্যয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আক্রান্ত দেশগুলোতে দারিদ্র্য বৈষম্য বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রিডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, জলবায়ু অভিঘাতে আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে বাংলাদেশ। এই অভিঘাত মোকাবেলা না করে দারিদ্র্য মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এজন্য অবকাঠামো ও দুর্যোগ মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা থাকবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে