ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি বলে জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।তাই এসব ধারার বিষয়ে আলোচনার জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
রোববার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের তিন মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টার বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ এবং ৫৩ এ ৯টি ধারার বিষয়ে মূলত আজকের আলোচনায় উঠে এসেছে। অন্যান্য ধারার বিষয়ে কারও বক্তব্য নেই। সে ক্ষেত্রে যেহেতু আইনটি ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে পাস হয়ে গেছে। তবে এখনও রাষ্ট্রপতি আইনটিতে স্বাক্ষর করেননি। এরপর খবরের কাগজে এ আইনের বিষয়ে আপত্তি তুলে ধরেছে সম্পাদক পরিষদ। আজকের বৈঠকে ২১ ধারাটা যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি ৮টি ধারার ব্যাপারে আমিসহ তথ্যমন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করব।
তিনি বলেন, আগামী ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক রয়েছে। কিন্তু জানতে পেরেছি ওই বৈঠকে অনেক এজেন্ডা রয়েছে। তাই হইতো সেদিন এটা উপস্থাপন করা সম্ভব হবে না। কিন্তু তার পরে যে সভা হবে সেখানে এ বিষয়টি উপস্থান করব। সেখানে আলোচনার জন্য আমাদের যে ট্রামস অব রেফারেন্স দেয়া হবে। সে ট্রামস অব রেফারেন্সের আলোকে আবার আলোচনায় বসা হবে। সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনায় বসতে হতে পারে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছে। এ ডিজিটাল জগতে ডিজিটাল অপরাধীরা উৎপাত ও বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ অপরাধীদের শক্ত হতে দমন করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। তবে কোনো আইন দ্বারা যদি গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটি আমাদেরও উদ্বেগ। আমি মনে করি গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করা গণতান্ত্রিক কাজ।
উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়। সম্পাদক পরিষদ আইনটি পাস হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর পরিষদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তথ্যমন্ত্রী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়।
চিঠিতে মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করে ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনটি নিয়ে বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়। তথ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সম্পাদক পরিষদ কর্মসূচি স্থগিত রেখে বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হয়।
এদিকে সম্পাদক পরিষদ থেকে বলা হয়, আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকে আইনমন্ত্রী ছাড়াও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব আবুয়াল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে সম্পাদকদের মধ্যে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, যুগান্তর-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবির, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সম্পাদক নঈম নিজাম, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকাল-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।