প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় গণতন্ত্রের অবস্থা ও আসন্ন নির্বাচনের আশংকা সম্পর্কিত বিরোধীদের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনৈতিক সংবাদ ও নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহকারী রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স-এ লিখেন, ‘তারা (বিরোধী দল) ভুল বলছে। তাদের একটি দাবিও সত্য নয়।’ রোববারের সংখ্যায় তার এই নিবন্ধ ছাপা হয়।
জয় বলেন, সরকার বিরোধীদের দাবি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ভেঙ্গে পড়েছে। তাদের বক্তব্য ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন অকার্যকর এবং তারা আরো বলছে যে, আসন্ন নির্বাচনের অবস্থাও অনুরূপ হবে’।
তিনি বলেন, বিরোধীদের অভিযোগ হচ্ছে কয়েকজন বিরোধী নেতার অন্তর্ধানের বিষয়টি সরকারের ষড়যন্ত্র।
এই প্রবন্ধে তিনি লিখেন, ‘তারা ভুল বলছে। তাদের একটি দাবিও সত্য নয়।’
জয় বলেন, প্রকৃত সত্য হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বিগত নির্বাচনটি ইচ্ছাকৃতভাবে বয়কট করেছে এবং ‘পরবর্তীতে দাবি করে যে খুব স্বল্প সংখ্যক রাজনৈতিক দল এতে অংশ নিয়েছে। যা ছিল একটা ভাওতাবাজি ও হাতাশাপূর্ণ।’
প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের অভিযোগ সম্পূর্ণ বিএনপির ক্ষেত্রে প্রযোজন্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য নয়। বিএনপি ওই নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্যই সংসদের একটি আসনেও প্রার্থী দেয়নি।’
তিনি বলেন, বিএনপি প্রকৃতপক্ষে ‘বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছে।’
জয় তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারংবার বলেছেন- অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্রের ভিত্তি এবং এমনকি নির্বাচন তদারকে সহায়তা করার জন্যও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান- অথচ দলটি তার ছাড় দেয়ার বিষয়ও নাকচ করে দেয় এবং এর বিপরীতে এ দলের কতিপয় নেতা ভোট কেন্দ্রে বোমা নিক্ষেপের পথ বেছে নেয়।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দ তাদের জোট সদস্যদের এবং যুদ্ধবাজ জামায়াতে ইসলামীর সহায়তায় সহিংস প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে ২০১৪ সালে ভোট ব্যাহত হয় এবং জাতির আঁতে ঘা লাগে।
জয় তার প্রবন্ধে বলেন, বিএনপি ও তাদের দোসররা হাজার হাজার বাড়ি-ঘর, গাড়ি, ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়। বিদ্যুৎ স্থাপনা ধ্বংস করে, আইন-শৃংখলা বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে হত্যা করে এবং সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। নির্বাচনের দিন তারা পেট্রোল বোমা নিয়ে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয়।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আরেকটি খারাপ দিক হচ্ছে বিএনপি এ বছরও পুনরায় নির্বাচন থেকে দূরে থাকছে, যা আবারো গণঅসন্তোষ ও সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি করছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেন, ওখানে কতিপয় ব্যক্তি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘হামলাকারীরা ছিল গ্রামের অপর পাশ থেকে আসা আমাদের প্রতিবেশী। তারা সকলেই বিএনপি-জামায়াতের লোক।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে দেয়া ওই ব্যক্তির বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদেরকে ভোট দিতে বারণ করেন। সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে প্রকৃতপক্ষে তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখে, যাতে কেউ ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারে। তারপর ১১টার দিকে তারা আক্রমণ শুরু করে।’
জয় বলেন, কিছু বিএনপি নেতা সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তাদের ওই কর্মকা-ের ফলে ওই দলটির (বিএনপি) জনপ্রিয়তা এ যাবত কালের মধ্যে সবচেয়ে হ্রাস পায়।
কিন্তু তিনি বলেন,বিএনপি’র সন্ত্রাসী একটি গ্রুপ বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
জয় বলেন, ‘অভিযোগ করা হয়েছে এমন প্রত্যেকটি নিখোঁজের ঘটনা তদন্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।’
তিনি বলেন, তারা এ ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ পাননি এবং ‘তারা যা পেয়েছেন তাহলো কয়েকজন নিখোঁজ ব্যক্তি সহিংসতার অপরাধের আইনী প্রক্রিয়া থেকে বাঁচতে পালিয়েছিলেন।’
জয় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনা উল্লেখ করেন, যাকে (সালাহউদ্দিন) ২০১৫ সালে পুলিশ অপহরণ করেছিল বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ২ মাস পরে ভারতে পলাতক অবস্থায় ওই দেশের পুলিশ তাকে আটক করে জানায়, বাংলাদেশে বিচার থেকে বাঁচতে সে এখানে পালিয়ে আছে।’
বিএনপি সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারের বিষয়টি উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘অন্যেরা তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছেন’। ফরহাদ মজহার ‘নিখোঁজের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে তাকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকায় আসার পথে বাসে পাওয়া যায়।’
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, বিএনপি তাদের অতীতের ভুলগুলো শিকার করবে এবং প্রকৃত বিরোধীদলের ভূমিকা রাখবে। সরকারও এমনটি আশা করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি লিখেছেন, ‘সরকার আশা করে বিএনপি তাদের ভুলগুলো ধরতে পেরেছে এবং ২০১৮ সালে সহিংসতা নয় বরং আদর্শের যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশ একটি বিরোধী দলের কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করে না।’
জয় উল্লেখ করেন যে বিএনপি’র কিছু লোক মনে করে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তারা তা করতে পারবে না। আর কিছু ভাষ্যকার তার মুক্তি দাবি করছে। এমনকি তাকে মুক্তি দেয়া না হলে নির্বাচন বানচাল করতে তারা রাস্তা দখল করে নেয়ারও হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘তেমনটি ঘটলে বাংলাদেশের কষ্টার্জিত আইনের শাসনের প্রতি অটলতার পরাজয় ঘটবে।’
তিনি উল্লেখ করেন এতিমদের জন্য রাখা আড়াই লাখ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ চুরি করার জন্য খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদন্ড হয়েছে।
জয় বলেন, তার বিরুদ্ধে আরো ১৯টি অভিযোগ বিবেচনাধীন রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দুর্নীতি সংক্রান্তÍ। স্বাধীন দুর্নীতি কমিশন এ মামলা করেছে। বাকি ১৪টি ২০১৪ সালে জ্বালাও-পোড়াও সংক্রান্ত।
জয় বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এর কয়েকটি এতিমদের আড়াই লাখ মার্কিন ডলার তসরুপের জন্য।
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্ট তারেক রহমানকে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে। এই মামলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোন আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিআই-এর একজন এজেন্টের সাক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এছাড়া জয় বলেন, তারেক রহমান ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায়ও অভিযুক্ত হয়েছে। এই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং শেখ হাসিনাসহ ৩শ’ জন আহত হন। বিএনপি’র অন্য অনেক নেতার মতো তারেক রহমানও সাজা এড়াতে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘সেই অনুপস্থিতি আসলে একজন ব্যক্তির অনুপস্থিতি। এটি কিছুতেই গোটা দলের জন্য ভোটারদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অজুহাত হতে পারে না।’
জয় আরো বলেন, ‘বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এবং তারা এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল যার জন্য তারা এখন অনুতাপ করছে। সেই পরিহাস আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের মন থেকে তা মুছে যাবে না।’
নিবন্ধের উপসংহারে জয় বলেন, ‘তারা (জনগণ) ভাল করে জানে। তারা ভালো কিছু পাওয়ার দাবি রাখে।’