অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী (এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের) ‘অবসর’ ও ‘কল্যাণ’ ভাতা পাচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত আবেদনকারীরা এ সুবিধা পাবেন।এক্ষেত্রে কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতার সুবিধা দেয়া হবে সরকারের সর্বশেষ অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে। আর পুরনো স্কেলে পাবেন অবসর সুবিধা বোর্ডের আবেদনকারীরা। এ সংক্রান্ত সরকারের গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সুবিধা দিতে সরকারের ব্যয় হবে ৭৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা দেবে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ২৫৭ কোটি টাকা দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সচিব এবং শিক্ষা সচিবকে পত্র দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণে দুটি আর্থিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তা হলো- ‘শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ এবং ‘শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’। আর্থিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে অবসরপ্রাপ্তদের সুবিধা দিতে পারছিল না ‘শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড ও ‘শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’। এ কারণে সুবিধাভোগীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো পত্রে বলা হয়, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের কাছে দেয়া আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কল্যাণ ট্রাস্টের আবেদন নতুন বেতন স্কেলে এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য আপাতত পুরনো বেতন স্কেলে নিষ্পত্তি করতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন ৭৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ২৫৭ কোটি টাকা সমন্বয় করা হবে শিক্ষা বিভাগের বাজেট থেকে। এ বরাদ্দ থেকে কল্যাণ ট্রাস্টকে ২২৫ কোটি টাকা এবং অবসর সুবিধা বোর্ডকে ৫৩২ কোটি টাকা দেয়া যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবসরে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত কল্যাণ ভাতা চেয়ে ২৫ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করেছেন শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে। পাশাপাশি অবসর সুবিধা বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন ২৪ হাজার ৩৪৪ জন।
এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান হিসেবে ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন।ভুক্তভোগীদের আবেদন ও আর্থিক বিশ্লেষণ করে ওই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে।
উল্লেখ্য, শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয় ১৯৯০ সালে এবং অবসর সুবিধা বোর্ড গঠন হয় ২০০২ সালে। উল্লেখিত আবেদনের মধ্যে ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৪৮৫ শিক্ষক-কর্মচারীকে পুরনো বেতন স্কেলে (সপ্তম) ভাতা দেয়া হয়েছে। অথচ এসব অবসরপ্রাপ্তর নতুন বেতন স্কেলে সুবিধা পাওয়ার কথা। ফলে কমিটি নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী তাদের সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ জন্য অতিরিক্ত ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সূত্র মতে, অবসর সুবিধা বোর্ডের অধীনে আবেদনকারীদের মধ্যে আংশিক ভাতা দেয়া হয় ৫ হাজার ১২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে। সরকারের গঠিত কমিটি এদের পূর্ণাঙ্গ ভাতা দেয়ার সুপারিশ করেছে।