স্বর্ণ নীতিমালা : অনুমোদনের জন্য আজ মন্ত্রিসভায় উঠছে

বিশেষ প্রতিনিধি

আজ বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বর্ণ আমদানিতে স্বচ্ছতা ও চোরাচালান রোধে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত ২৩ মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ নীতিমালা নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

স্বর্ণ নীতিমালা বিষয়ে অর্থমন্ত্রী গত ২৩ মে বলেছিলেন, এখন স্বর্ণ আমদানি করব। এতদিন তো আমদানি হত না, সব স্মাগলিং হত। কোনোদিন স্বর্ণ এ দেশে আমদানি হয়নি।

আমদানিতে কি পরিমাণ ট্যাক্স দিতে হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, তেমন ট্যাক্স হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ফি কত হবে সেটা তিনি তাৎক্ষণিক বলতে পারেননি।

এ নীতিমালা কবে থেকে কার্যকর হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা এখন ক্যাবিনেটে যাবে তারপর কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, গত মে মাসে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের পর বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি কিছু বিষয়ে আপত্তি জানায়। পরে জুয়েলার্স সমিতির সুপারিশের প্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদকে চিঠি দেন অর্থমন্ত্রী। এতে স্বর্ণ ব্যবসার বেশকিছু বিষয় তুলে ধরা হয়।

অর্থমন্ত্রী চিঠিতে বলেন, দেশের স্বর্ণ ব্যবসার বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা দুটি কাজ করতে পারি। প্রথমটি, সোনার দাম আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা এবং সেজন্য যাদের কাছে স্বর্ণ আছে তাদের উইন্ডফল গেইনসের ওপরে প্রতি ভরিতে এক হাজার টাকা ভ্যাট আদায় করতে পারি। একই সঙ্গে আমরা প্রতি ভরি সোনার আমদানির ওপর এক হাজার টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করতে পারি।

দ্বিতীয়ত, আমরা উইন্ডফল গেইনের উপর যে টাকাটা আদায় করব, সেটা দুই কিস্তিতে দুই বছরের মধ্যে আদায় করব এবং একই সময়ে স্বর্ণ ব্যবসাকে বৈধ ঘোষণা করব। কখন সেই বৈধতা ঘোষণা করা হবে সেটি এখন নির্ধারণ করতে হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানায়, স্বর্ণ আমদানিতে বন্ড সুবিধা থাকছে। আমদানি করে দেশের ভেতর অলঙ্কার বানিয়ে তা বিদেশে রফতানি উন্মুক্ত করতে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের রফতানিকারকদের নগদ প্রণোদনাসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমিও বরাদ্দ দেয়া হবে। এ ছাড়া, অলঙ্কার তৈরি করে যারা দেশের মানুষের কাছে বিক্রি করবে, তারাও আমদানি করা স্বর্ণ ব্যবহার করতে পারবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার সরাসরি স্বর্ণের বার আমদানি করতে পারবে। তবে ডিলার স্বর্ণের বার ছাড়া কোনো স্বর্ণালঙ্কার বা অন্য কোনো ফর্মে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে না। স্বর্ণের বার আমদানির সময় ডিলার বন্ড সুবিধা নিতে পারবে। এসব ডিলার স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বর্ণের বার বিক্রি করবে।

তবে স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া চাহিদার বিপরীতে স্বর্ণের বার আমদানির আগে সম্ভাব্য কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে ওই ব্যয় পরিশোধের বিষয়ে অনাপত্তিপত্র নেবে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনাপত্তি বিষয়ে অবহিত করবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারীকে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং মূসক (মূল্য সংযোজন কর) নিবন্ধিত হতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণের বার আমদানির সময় বন্ড সুবিধা গ্রহণ করে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে স্বর্ণের বার আমদানির নিমিত্তে অনুমোদিত ডিলারকে আবশ্যিকভাবে আমদানি নীতি আদেশ এবং কাস্টমস অ্যাক্টের বিধান অনুসরণপূর্বক বন্ড লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে