দুই দফা নাকচ করলেও শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিকাল তিনটা ৪২ মিনিটে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারে করে তাকে হাসপাতালে আনা হয়।
এর আগে বেলা তিনটা ১১ মিনিটে ওই গাড়িতে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রওয়ানা হয় গাড়িটি।
বিএনপি নেত্রীকে হাসপাতালে আনার আগেই কারাগার ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়, যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণও আরোপ করা হয়।
খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হবে-এমন তথ্যে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয় নানা প্রস্তুতি। হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৬১১ নম্বর এবং ৬১২ নম্বর কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয় তার জন্য। আর তিনি কারাগার থেকে রওয়ানা হওয়ার কিছু সময় আগে বিকাল তিনটার দিকে তার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্রও একটি গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনা হয়। এর আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আদালতের নির্দেশে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।
গোলাপী রঙের শাড়ি ও কালো রঙের চোদ চশমা পরা খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নামার পর একটি হুইল চেয়ারে করে তাকে লিফটে তোলা হয়। এ সময় তিনি কোনো কথা বলেননি।
বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, এ ডেজ এম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা সেখানে খালেদা জিয়া আসার আগেই তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে বিএনপি নেত্রীকে কেবিন ব্লকে নেয়া হলে কিছু নেতা-কর্মী বাইরে থেকে তার নামে স্লোগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমরা কারাগার থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে তাকে নিয়ে এসেছি। শাহবাগে কোটা বহালের দাবিতে আন্দোলন ছিল। এগুলোকে অগ্রাহ্য করেই তাকে নিয়ে এসেছি। কোনো সমস্যা হয়নি।’
হাসপাতালে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা থাকবে, নেতা-কর্মীদের দেখা করতে দেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কারাবন্দীদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে একটা নিয়ম আছে। এর বাইরে কেউ দেখা করতে পারবে না। আর এখানে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। গোয়েন্দারাও থাকবেন।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড হওয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে কারাগারে নেয়া হয়। আর মার্চের শেষে তার অসুস্থতার কথা শোনা যায়। ৭ এপ্রিল একবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে রোগ পরীক্ষা করা হয়। এরপর জুলাইয়ে আরও এক দফা তাকে এখানে আনার চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু সে সময় খালেদা জিয়া জানান, তার দাবি অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও তিনি যাবেন না। এমনকি সরকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তাব করলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন। পরে সেপ্টেম্বরে বিএনপি ইউনাইটেড না হলে অ্যাপোলোতে তাদের নেত্রীকে ভর্তির সুযোগ দেয়ার দাবি জানায়। কিন্তু সরকার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির অনুমতি দেয়নি।
বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠন চেয়ে একটি রিট আবেদনের পর গত ৪ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত ৪ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তির নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী আজ সকাল থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করে।
হাসপাতালেও খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন বিএনপি নেতারা। তার জন্য ব্যবস্থা করা হুইল চেয়ারেরও। এই হাসপাতাল ও আশেপাশের এলাকাতেও কঠোর পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় সকাল থেকেই।