বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রায়ের আগের সন্ধ্যায় (মঙ্গলবার) নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় যাই হোক না কেন, বিএনপি কোনো সহিংস কর্মসূচি দেবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
এক প্রশ্নে রিজভী বলেন, দেখি কী রায় হয়। যে রায়ই হোক না কেন বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেবে। সরকার নানাভাবে নিজেরাই নাশকতার করে ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপাতে পারে বলেও দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন রিজভী। সরকারের উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
আগামীকাল বুধবার আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা হবে যেখানে আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলায় ২৩ জন নিহত হয়, আহত হয় কয়েকশ। এই হামলার পর বিএনপি শাসনামলে যে তদন্ত হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল শুরু থেকেই। হামলার পর আলামত নষ্ট করা ছাড়াও অপরাধীদেরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইকে দেশে আনা হলেও সে সময় তারা অসহযোগিতার কারণে সরকারের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে দেশ ছাড়ে।
জোট সরকারের আমলে জজ মিয়া নামে নিরীহ একজনকে প্রধান আসামি করে পুলিশের প্রতিবেদন দেয়া নিয়ে হাস্যরস ছিল শুরু থেকেই। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রকাশ হয়, জজ মিয়াকে আসামি করার বিনিময়ে তার পরিবারকে নিয়মিত মাসোহারা দিত পুলিশ।
তত্ত্বাবধায়কের আমলেই তদন্ত করে জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু ছাড়াসহ ২২ জনকে আসামি করে বিচার শুরু হয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর অধিকতর তদন্ত করে তারেক রহমান, জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৩০ জনকে নতুন করে আসামি করা হয়। বিএনপি এই রায় নিয়ে শঙ্কিত। তারেক রহমানকে সরকার সাজা দিতে চাপ দিচ্ছে বলে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন নেতারা।
রিজভী বলেন, আগামীকাল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ও সরকারের ইচ্ছার বাইরে হতে পারবে কি না তা নিয়েও জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। নিন্ম আদালতের বিচারকদের ওপর প্রতিনিয়ত চাপের কারণে মানুষ এখন ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলার রায় নিয়ে প্রহসনের মঞ্চে পর্দা ওঠার পর কী দৃশ্যমান হবে তা নিয়ে চারিদিকে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকারের নির্দেশিত ফরমায়েশি রায় বাস্তবায়নের জন্যই নানা কিছু করা হচ্ছে। গতকাল আমরা দেখলাম-সর্বোচ্চ আদালতে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত একজন মন্ত্রীকে হাইকোর্ট খালাস দিয়েছে। এই খালাস কার নির্দেশে হয়েছে সেটির জন্য বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। জনগণও তা বুঝে নিয়েছে।
সংবাদ সম্মলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবীবুর রহমান হাবীব, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহম্মেদ, মুহাম্মদ মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।