তিতলির প্রভাবে শাহপরীর দ্বীপে ৫ হাজার মানুষ ঘরছাড়া

সারাদেশ ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ। এ দ্বীপে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসতি। জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

গত দুই দিনে দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বেড়িবাঁধ না থাকায় সাগরের অস্বাভাবিক জোয়ারে মসজিদসহ শতাধিক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক ঘর পানিতে ডুবে গেছে। এসব ঘরের লোকজন টেকনাফসহ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

universel cardiac hospital

এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েকদিনে শাহপরীর দ্বীপের মাঝারপাড়া ও দক্ষিণপাড়ার আরও দুই শতাধিক ঘর সাগরে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, সাগরে জোয়ারের পানিতে মসজিদসহ ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার খবর পেয়েছি। কতগুলো ঘর ভেঙেছে তার হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে তালিকা পাঠানো হবে। যাতে আর কোনও ঘরবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে না যায় সে ব্যবস্থা করা হবে।

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, গত পাঁচ বছর আগে দ্বীপের পশ্চিম দিক থেকে তিন কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর থেকে দ্বীপের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া খোলা বাঁধ যদি মেরামত না করা হয় তবে আগামী কয়েকদিনের ভেতর আরও শতাধিক ঘর সাগরে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিনে যেসব মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন– মাঝারপাড়ার নুর বেগম, সোনা মিয়া, মোহাম্মদ ইউনুছ, মোহাম্মদ ইছুপ, মোহাম্মদ জলিল, আমানউল্লাহ, মোক্তার আহম্মদ, মোহাম্মদ ছব্বির, মোহাম্মদ শফিক, মোহাম্মদ রফিক, তৈয়ুবা খাতুন, আলী হোসেন এবং দক্ষিন পাড়ার দুদু মিয়া, সৈয়দ করিম, মোহাম্মদ শরীফ, কালা বানো, জোলেহা, মাহামুদা খাতুন, আবদুল হাকিম, শামসুল আলম, শাহ আলম, আবদুল রশিদ, খতিজা, আবদুল কুদ্দুস, মোহাম্মদ বশির, মোহাম্মদ শফিকসহ অনেক।

ঘর ভেঙে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া নুর বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জোয়ারের পানিতে ঘর ভেঙে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। গতকাল থেকে মুখে একমুঠো খাবার দিতে পারিনি। পাঁচ বছর ধরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে মরছি। কেউ আমাদের কষ্টের খবর নিতে আসে না।

পাউবো কক্সবাজারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহপরীর দ্বীপের প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে এক কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি। তবে যে খোলা বাঁধ থেকে সাগরের পানি ঢুকছে সেখানে জিও ব্যাগ বসানো হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, উত্তর-দক্ষিণের দুই কিলোমিটারের ভেতর যেসব ঘরবাড়ি রয়েছে সেখানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। যে স্থান থেকে পানি ঢুকছে সেখানে আবারও বালির জিও ব্যাগ ও বস্তা বসানো হবে। পুরো তিন কিলোমিটারের কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে কাজ শেষ করা হবে।

এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (স্থানীয় ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিনেই প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি হারিয়েছেন দ্বীপের মানুষ। খোঁজখবর নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে