ঘূর্ণিঝড় তিতলি : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চরম দুর্ভোগ

টেকনাফে গত তিন দিন ধরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ার ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। টেকনাফের পুটুবনিয়া, শালবাগান, জাদিমুড়ায়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পে অনেকেই ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকালের ভারি বৃষ্টিতে টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিতদের জীবনযাত্রা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরগুলোর ভেতরে জমেছে কাদা-পানি। যাতায়াত করার সময় পিচ্ছিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় এ ব্যাপারে টেকনাফে শালবাগান নামক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ইসমাইলের (৩০) সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, গত তিন দিন ধরে ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে টানা বৃষ্টির ফলে ক্যাম্পগুলোতে কষ্টের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে গেছে। বেশি বৃষ্টি হওয়ায় শিবিরে পানি জমে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। আমরা যে জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি সেটি পাহাড়ের পাদদেশ সংলগ্ন। ক্যাম্পগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকায় অনেকেই ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মিয়ানমার মংডু থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী মরিয়ম জানান, তার পরিবারে ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে কোনো রকম কষ্ট করে রাত যাপন করছি। বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কষ্টের পরিমাণটা বাড়ছে। বাতাস একটু বেশি হলে নড়াচড়া করে ঝুপড়ি ঘর। বৃষ্টিতে পানি আটকানো যায় না, ওপর থেকে নিচের দিকে পানি নামলে ঘর স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। তাই রাতে না ঘুমিয়ে বসে থাকতে হয়। বাইরে চলাচলের রাস্তাগুলোর বেহাল দশা।

টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতলব বলেন, বৃৃষ্টি হলে রোহিঙ্গা শিবিরের দুর্ভোগ বেড়ে যায়, এসব শিবিরের ঝুপড়ি ঘরগুলো খুবই দুর্বল। ফলে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। তাছাড়া শিবিরের রাস্তাগুলো মাটির হওয়ায় চলাচল করতে কষ্ট হয়।

এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল হাসান বলেন, বৃষ্টিতে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে কক্সবাজারের কিছু এলাকায় প্রভাব পড়েছে। তবে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সঙ্কেত দেয়া হয়েছে। এদিকে টেকনাফের দু’পাশে পাহাড় ও বন কেটে বেশিরভাগই বসতি গড়েছে রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে টেকনাফের পুটুবনিয়া, শালবাগান, জাদিমুড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে অনেক রোহিঙ্গা এখনো ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ফলে বৃষ্টি হলে উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটে তাদের। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা নির্যাতনের ফলে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। পুরনোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে সাড়ে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে