‘জামায়াত থাকলে আমার দল কোনো ঐক্য প্রক্রিয়ায় যাব না। তবে অন্যদলগুলো কী করবে তা বলতে পারি না।… সারাজীবনে কখনো জামায়াতের সাথে যাইনি শেষ জীবনে এসে সেটা করতে যাব কেন?- গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের এই বক্তব্যে গণমাধ্যমের শিরোনাম ছিল ‘জামায়াত সঙ্গে থাকলে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য নয়: ড. কামাল’।
সেই ড. কামাল সময়ের প্রয়োজনে ১৩ অক্টোবর বিএনপিকে সঙ্গে নিয়েই ঐক্যের ঘোষণা দেন, নাম রাখা হয় ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। যদিও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াত এখনও বিএনপির সঙ্গেই জোটবদ্ধ আছে।
এর মধ্যে এই জোটের আলোচনা থেকে ছিটকে গেছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। আর তিনি সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্টতই বলেছেন, পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধীর সঙ্গেই ঐক্য হয়েছে।
এই জোটের আলোচনার শুরু থেকেই ছিল জামায়াত প্রসঙ্গ। কামাল হোসেন এবং বি. চৌধুরী বারবারই আপত্তি জানিয়েছেন স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে নিয়ে। কিন্তু ঐক্যের আলোচনায় মধ্যস্ততা করা গণস্বাস্থ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী একটি কৌশল বের করেন, যেটি মেনেই শেষমেশ ঐক্য হয়।
জাফরুল্লাহর কৌশলটা ছিল এমন- বিএনপির ঐক্যবদ্ধ থাকবে জামায়াতের সঙ্গে, আর জাতীয় ঐক্য হবে বিএনপির সঙ্গে। ফলে এখানে জামায়াত কোনো বিষয় নয়। শেষ পর্যন্ত হলোও তাই।
তবে এটি জামায়াতে আপত্তি ভুলা কি না-সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। কারণ না সংবাদ সম্মেলন, না পরে এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা নেতারা কোনো প্রশ্ন নিয়েছেন। আবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়া নেতাদের কেউই জামায়াতের প্রসঙ্গটি নিয়ে টু শব্দও করেননি।
ঐক্যের আলোচনায় মধ্যস্থতা করা জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য হয়নি। জামায়াতকে বাদ দিয়েই আমাদের ঐক্য হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটে থাকার পরও এই ঐক্যে জামায়াত নেই বলার সুযোগ আছে কি না, এই প্রশ্নে জাফরুল্লাহ বলেন, এটা নিয়ে তর্কে যাব না। আগামী নির্বাচনে জামায়াত কোন ইস্যু হবে না।
ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনের শেষে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, এসব নিয়ে এখন কথা বলার সময় নেই।
এ বিষযে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গৌতম চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি এখানে একটি কৌশল নিয়েছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য তাদের সাথে ঐক্য, আর ভোটের রাজনীতির জন্য জামায়াতকে তাদের দরকার। সেই জায়গা থেকে জামায়াত ছাড়ছে না বিএনপি।
জামায়াত কেন বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ-সেটিও ব্যাখ্যা করেন এই শিক্ষক। বলেন, আগামী নির্বাচনে জামায়াতের কৌশলগত গুরুত্ব আছে। তারা ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি করে, তাদের পাঁচ শতাংশ ভোটের অনেক গুরুত্ব। সারা দেশে ৫০-৬০ আসনে জামায়াতের ভোট জয় পরাজয়ের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বিএনপি জামায়াত না ছেড়ে ঐক্য করলে সরকারি দল সুবিধা পাবে।