সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে এ আইনের খসড়া প্রকাশ করে মতামত নেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরপর আর এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো আইনটি দ্রুত চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম খসড়া আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গণমাধ্যমকর্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে কর্মরত পূর্ণকালীন সাংবাদিক, কলাকুশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী বা নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকাধীন ছাপাখানা এবং বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিতরা হলেন গণমাধ্যমকর্মী। সম্প্রচারকর্মী হলেন, সম্প্রচার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত গণমাধ্যমের কর্মী।
তিনি জানান, প্রযোজক, পাণ্ডুলিপি লেখক, শিল্পী, ডিজাইনার, কার্টুনিস্ট, ক্যামেরাম্যান, অডিও ও ভিডিও এডিটর, চিত্র সম্পাদক, শব্দ ধারণকারী, ক্যামেরা সহকারী, গ্রাফিক্স ডিজাইনারসহ পেশাজীবীরা যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের কলাকুশলী বলা হবে।
সাংবাদিকদের চাকরি আর শ্রম আইনের অধীনে নয় :
শফিউল আলম বলেন, এই আইনটি ভিন্নভাবে ছিল, দ্য নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ কন্ডিশন সার্ভিস অ্যাক্ট-১৯৭৪ এই আইনের আওতায় এগুলো চলতো। এটার সঙ্গে শ্রম আইনের ওভারল্যাপিং হয়। সাংবাদিকদের শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং ডেফিনেশনের মধ্যে শ্রমিক হিসেবে ডিফাইন করা হয়েছিল। ওই অংশটি ওখান থেকে বেরিয়ে এখানে এসেছে। শ্রমিক কথাটা থাকবে না।
তিনি বলেন, যারা গণমাধ্যমে কাজ করবেন তারা গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিচিত হবেন।
সপ্তাহে কাজ করতে হবে ৩৬ ঘণ্টা :
নতুন আইনে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, এর থেকে বেশি কাজ করালে ওভারটাইম দিতে হবে।
ছুটিতে যত সুবিধা :
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। অর্জিত ছুটি ৬০ দিনের বদলে ১০০ দিন করা হয়েছে। ১১ দিনে একদিন করে জমা হবে। প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী চাকরির ১৮ ভাগের এক ভাগ সময় অসুস্থতাজনিত ছুটি পাবেন। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মীরা এককালীন বা একাধিকবার সর্বোচ্চ ১০ দিন উৎসব ছুটি পাবেন জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, নারীরা সরকারি বিধি অনুযায়ী অর্থাৎ ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। আগে ৮ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতেন নারী গণমাধ্যমকর্মীরা।খসড়া আইন অনুযায়ী গণমাধ্যমকর্মীরা ৩ বছর পরপর পূর্ণ বেতনসহ শ্রান্তি বিনোদন ছুটি পাবেন। গণমাধ্যমকর্মী বিধিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা পাবেন।
এক বছর চাকরির পর চালু হবে প্রভিডেন্ট ফান্ড :
শফিউল আলম বলেন, আইন অনুযায়ী, প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করতে হবে। নিয়োগের এক বছর পর থেকে ভবিষ্যৎ তহবিলে মাসিক চাঁদা দিতে পারবেন। আগে দুই বছর চাকরি হলে ভবিষ্যৎ তহবিলে চাঁদা দিতে পারতেন। সর্বনিম্ন ৮ ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অর্থ এই তহবিলে জমা রাখা যাবে। আগে ৭ শতাংশ অর্থ জমা রাখা যেত। মালিককে সমহারে টাকা রাখতে হবে।
পাওনা আদায়ে আদালতে মামলা করা যাবে :
শফিউল আলম বলেন, যদি কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কাছে একজন গণমাধ্যমকর্মীর বকেয়া পাওনা থাকে তবে গণমাধ্যমকর্মী বা তার লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, মৃত গণমাধ্যমকর্মীর ক্ষেত্রে তার পরিবারের কোনো সদস্য বকেয়া পাওনা আদায়ে যথোপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন।
নতুন আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, এটি বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
গণমাধ্যমের চাকরিবিধি পরিদর্শনে থাকবে কমিটি :
আইনে পরিদর্শন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা পরিদর্শক হিসেবে গণ্য হবেন। পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকরিবিধি থাকবে, যা এই আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রচলতি আইন অনুসরণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করে অভিযোগ নিরসন পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকার ওয়েজবোর্ড গঠন করবে।ওয়েজবোর্ডের সিদ্ধান্ত সব গণমাধ্যম মালিককে পালন করতে হবে।
আইন ভাঙলে মালিকের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা :
সচিব বলেন, এই আইনে কোনো ধারা বা আইনের অধীনে প্রণীত বিধি লঙ্ঘন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর জন্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। জরিমানা আদায় না হলে জেল দিতে পারবেন আদালত।
তিনি বলেন, সরকার এই আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়াসহ যে কোনো পর্যায়ে সরকার প্রদত্ত যে কোনো সুযোগ-সুবিধা স্থগিত বা বন্ধ করে দিতে পারবে।